জীবনেও বদলাচ্ছে ভাগ্য: নকশিকাঁথায় স্বপ্ন বুনছেন নারী কয়েদিরা

প্রকাশক: Dainik Jagroto Matrivumi JM TV
প্রকাশ: 5 hours ago

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি,

দণ্ডপ্রাপ্ত জীবনের অন্ধকারেও নতুন আলো খুঁজে পাচ্ছেন মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের নারী বন্দীরা। জেলা প্রশাসন ও কারা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কারাগারের নারী ওয়ার্ডে শুরু হয়েছে নকশিকাঁথা তৈরির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই কুটির শিল্পের মাধ্যমে কয়েদিরা বন্দি অবস্থাতেই আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন, বদলে যাচ্ছে তাঁদের ভবিষ্যতের পথচলা।সোমবার (৭ জুলাই) জেলা কারাগারে কারারক্ষী ও কয়েদিদের অংশগ্রহণে প্রীতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা (যুগ্ম সচিব) বলেন, “কারাগারে বন্দিদের মানসিক বিকাশ ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

নারী কয়েদিদের নকশিকাঁথা প্রশিক্ষণ তারই একটি সফল উদাহরণ।”অনুষ্ঠানের আগে জেলা প্রশাসক কারাগারের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। নারী ওয়ার্ডে নকশিকাঁথা তৈরির প্রশিক্ষণকেন্দ্র ঘুরে দেখেন এবং কয়েদিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি আশ্বাস দেন, এই শিল্পের মাধ্যমে তৈরি পণ্য ঢাকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে, এবং কয়েদিরা বিক্রিত অর্থের অংশ নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে পাবেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী কয়েদি বলেন, “জেল সুপার আর জেলার স্যারের অনুপ্রেরণায় আমি এখানে নকশিকাঁথা সেলাই শিখেছি। এখন চাই, মুক্তির পর এই কাজ চালিয়ে যেতে এবং অন্য নারীদেরও শিখিয়ে সাবলম্বী করতে।”জেলা প্রশাসক আরও জানান, শুধুমাত্র নারী বন্দীদের জন্য নয়, পুরুষ বন্দীদের জন্যও রয়েছে ফার্নিচার তৈরির প্রশিক্ষণ ও কম্পিউটার শেখার সুযোগ। এসব প্রশিক্ষণ তাদের পুনর্বাসন ও ভবিষ্যত জীবনের পথে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।তিনি বলেন, “নকশিকাঁথা আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক অমূল্য অংশ। একজন কয়েদিও যদি এই শিল্পের মাধ্যমে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারেন, সেটিই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।”এ সময় জেলা সুপার, জেলার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কারা চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা কারাগারের লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব ও অন্যান্য প্রশিক্ষণকেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং কার্যক্রম আরও ফলপ্রসূ করার দিকনির্দেশনা দেন।

কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসেই যে স্বপ্ন বোনা যায়—তা প্রমাণ করে চলেছেন মানিকগঞ্জের নারী কয়েদিরা। নকশিকাঁথার সূক্ষ্ম সুতোয় তাঁরা বুনছেন আশার গল্প, বদলে দিচ্ছেন নিজেদের ভবিষ্যৎ।