রাবি প্রতিবেদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের হিজাব-নিকাব খুলতে বাধ্য করা ও কটাক্ষ করার মাধ্যমে যৌন নিপীড়ন ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এই মানববন্ধন করে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন। মানববন্ধন থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। এসময় ‘স্টপ সারকাজম অ্যাবাউট হিজাব’, ‘শিক্ষক যদি এমন হয়, আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’, ‘বাবার মত শিক্ষকের এ কেমন আচরণ!’, ‘মাই হিজাব, মাই রাইট’, ‘নিকাব নিয়ে হয়রানি, মানছি না, মানবো না’, ‘শেখ হাসিনার বাংলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাকারীর ঠাই নাই’, ‘হিজাব আমার অধিকার, হিজাব আমার অহংকার’সহ বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, কারো ধর্মীয় পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করা দেশের সংবিধানকে কটাক্ষ করার শামিল। মেসেঞ্জারে ড. হাফিজুর রহমানে কথোপকথন খুবই অরুচিপূর্ণ। শিক্ষকের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এধরণের মেসেজ মানানসই নয়। তিনি ক্লাসের মধ্যে ছাত্রীর হিজাব খুলতে বাধ্য করেছেন। এটা যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপও। তাকে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়শনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। এসময় ভুক্তভোগীদের মধ্যে ফাতেমাতুস্ সানিহা নামে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকদের কাজ হচ্ছে সাহায্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আগলে রাখা। অথচ সেই শিক্ষক (ড. হাফিজ) ক্লাসের প্রথম দিনেই একটা কাগজ দিয়ে বাতাস করায় আমাকে দাড় করান। তিনি বলেন, ‘পা থেকে মাথা পর্যন্ত এভাবে প্যাকেটের মত করে এসেছো কেনো? তোমার গরম তোমার কাছে রাখো’। উনি আমার সম্মানিত পোশাককে প্যাকেটের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আমার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছেন। এর মাধ্যমে উনি সংবিধানেরও অবমাননা করেছেন। সংবিধানের ১২ নাম্বার অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সকল নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার এবং প্রত্যেকের পোশাকের স্বাধীনতা রয়েছে। ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, তিনি শুধু আমাকেই এমন কথা বলেননি, আমার বান্ধবীদেরও বলেছেন। আমার এক বান্ধবীর নিকাবকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘হোয়াট ইজ দিস? এরকম লম্বা এটা কি ঝুলিয়ে এসেছো?’ এভাবে তিনি আমাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে হেনস্তা করেছেন। আমি চাইনা, আমাদের এই শান্তিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনো বোন এভাবে হেনস্তার শিকার হোক। আমি চাইনা, আর কোনো বোন বুলিংয়ের শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ুক। ড. হাফিজুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এর মানে হলো, সকল নাগরিক তাদের স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে। এখানে কারো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নাই। কেউ কারো ধর্মীয় পোশাককে কটাক্ষ করলে, সেটা দেশের সংবিধানকে কটাক্ষ করার শামিল। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের থেকে আমরা এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা কখনোই আশা করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যারা বহির্বিশ্বে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান উজ্জ্বল করেছেন। কিন্তু ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ড. হাফিজুর রহমানের মত কিছু শিক্ষক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুন্ন করেছেন। তিনি আরো বলেন, স্পষ্টতই এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। তিনি মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ছাত্রীদের ফ্লার্টিং মেসেজ করেছেন। মেসজগুলো খুবই অরুচিপূর্ণ। এক শিক্ষকের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এধরণের মেসেজ মানানসই নয়। তিনি ক্লাসের মধ্যে ছাত্রীর হিজাব খুলতে বাধ্য করেছেন। এটা যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপও। ড. হাফিজুর রহমানকে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়শনের পক্ষ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। একপর্যায়ে মানববন্ধনের স্থানে আসেন রাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক এবং কয়েকজন সহকারী প্রক্টর। এসময় উপ-উপাচার্য আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, আমরা বিষয়টা অবগত আছি। একটা জরুরী মিটিং ডেকেছি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে। মিটিংয়ের পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো, কি করা যায়। প্রয়োজনে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করবো। মানববন্ধনে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম রেজার সঞ্চালনায় অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসহ বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, সোমবার (১১ মার্চ) সকালে ফেসবুকে ইসলামিক স্টাডিজ পরিবার (রাবি) নামে একটি গ্রুপে সিদরাতুল মুনতাহা নামে একটি আইডি থেকে পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে হিজাব-নিকাব পরে যাওয়ায় কটাক্ষ ও হেনস্থা করার অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে মেসেঞ্জারে ছাত্রীদের সঙ্গে করা আপত্তিকর কিছু কথপোকথনের স্কিনশটও পোস্ট করা হয় ওই গ্রুপটিতে। এরপর বিকেলে ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করে বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী।
তারিফুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়