মোহাম্মদ শেখ ফরিদ, স্টাফ রিপোর্টার
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় মারধরের ১২ দিন পর মোঃ মোমিনুল ইসলাম মমিন (২২) এর মৃত্যুর এক মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত আটক হয়নি কেউ। আত্মগোপনে রয়েছে আসামীরা সকলেই। তবে ঘটনার পর বেড়িয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। কোন প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই হাসপাতালে ভর্তির পরদিনই তাকে ছাড়পত্র প্রদান করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার আমীর হোসেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মৃত মোমিনুল ইসলাম সদর উপজেলার ৫নং চাকলাহাট ইউনিয়নের মেহের পাড় এলাকার মোঃ ইব্রাহিম এর একমাত্র ছেলে। সে ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাতেন। এর মধ্যে ঘটনার কয়েকদিন আগে ঐ এলাকার মোঃ লিমন(৪০) এর মেয়ে মোছাঃ মনি(১৪) তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় মোমিন এর অটোরিকশায় করে পালিয়েছে সন্দেহে তাকে ধরে এনে লিমন এর ভাই রিপন(৩৫), তুহিন(২৫) তাদের পিতা নুরু (৬২) এর বাড়িতে সবাই মিলে বেধরক মারপিট করে। পরে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার উন্নত চিকিৎসা করার কথা বলে আসামীরা মোমিনুল ইসলাম কে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিতে বলে। এর মধ্যে কোন প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ড ডাক্তার আমির হোসেন ভর্তির পরদিনই তাকে ছাড়পত্র প্রদান করেন। পরে ১২ দিন পর তার মৃত্যু হয়। তাকে সুপরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে বোলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাকে যেভাবে মারপিট করা হয়েছে তা অত্যাধিক কৌশলে করা হয়েছে। এটা অনেক দক্ষতার সাথে করা হয়েছে। তার ঘাড়ে ও বুকে আঘাত করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, যেভাবে মারপিট করলে বা আঘাত করলে ভিটকিম কয়েকদিন পর মারা যাবে তা যারা মেরেছে তারা সেটা জানতো। চিকিৎসা নিলে রোগী বেঁচে থাকত তাই কৌশলে সেখান থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। পুরোটাই পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে। রোগীর কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা আসামীরা করেন নি। এ বিষয়ে ডাক্তার আমির হোসেন বলেন, আমি লিখে দিয়েছি সমস্যা হলে বহির্বিভাগের ডাক্তার দেখাতে। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগী এভাবে ছাড়পত্র দেওয়া কতটা যৌক্তিক তার কোন সঠিক উত্তর তিনি দিতে পারেন নি। তিনি হাসপাতালের আরএমও এর সাথে কথা বলতে বলেন। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও ডাক্তার আবুল কাসেম বলেন, যেহেতু আমি রোগী দেখিনি এবং ঐ রোগীর বিষয়ে কিছু জানিনা তাই কোন মন্তব্য করতে পারবো না। সিভিল সার্জন পঞ্চগড় ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাসপাতালের আরএমও আছেন। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে বলবেন। তবে পরবর্তীতে যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে আমি সেটা দেখবো। এ বিষয়ে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আসামীরা সবাই পলাতক। কয়েক দফায় অভিযান চালিয়ে কাউকে পাওয়া যায় নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর সঠিক তথ্য জানা যাবে। আসামীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন নিহতের পরিবার। অপরদিকে এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার জোর দ্বাবী জানান স্থানীয় সকলেই।