জনপ্রিয়

নারীর নামে নৈঃশব্দ্যের দাসত্ব: মুক্তির মুখোশে অদৃশ্য শেকল

প্রকাশক: Dainik Jagroto Matrivumi
প্রকাশ: 10 hours ago

লেখক -জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

নারী, তুমি কি জানো—তোমার চারপাশে এক নিঃশব্দ ষড়যন্ত্র ঘনিয়ে উঠেছে? শব্দে নয়, শ্রুতিমধুর স্লোগানে; অস্ত্রে নয়, আকর্ষণে; আদেশে নয়, আহ্বানে। তারা বলে—তুমি গৃহবন্দি, তুমি পরাধীন, তোমার স্বামী এক মনিব, তোমার সন্তান এক শৃঙ্খল।
তারা হাত বাড়িয়ে দেয়—নয় হাত ধরে তোলার জন্য, বরং টেনে নেওয়ার জন্য তোমার আপন পরিচয় থেকে। তারা বলে, “বেরিয়ে এসো!”—ঘর ছেড়ে, ভালোবাসা ছেড়ে, নিরাপত্তা ছেড়ে। কর্পোরেট আলোকিত পথেই নাকি তোমার মুক্তি। অথচ সেই পথে শুধু ঝলকানি, আলো নেই; শুধু দৌড়, গন্তব্য নেই।

তারা চায়, তুমি আয় করো—কিন্তু হারাও কোমলতা। তারা চায়, তুমি হাসো—কিন্তু চোখের গভীরে জমে থাক অজস্র নীরব আর্তি। তারা চায়, তুমি পোশাক পরো পছন্দমতো—কিন্তু নিজের দেহ হয়ে উঠুক অন্যের চাহনির বস্তু।

নারী, তুমি কি বুঝো না? তোমাকে তারা খুঁজে পায় না যখন তুমি পর্দায় ঢাকা, তারা চায় তোমার গায়ের চামড়ায় ফুটে উঠুক বিজ্ঞাপনের বার্তা। তারা তোমার সন্তানের মায়ের পরিচয় মুছে দিয়ে তোমাকে সাজায় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানিয়ে।

তাদের “স্বাধীনতা” এক মিথ্যা ছায়া—যা তোমার আত্মাকে পোড়ায় ধীরে ধীরে। তোমাকে নারী নয়, বানাতে চায় কর্মযন্ত্র; মায়ের স্থানে বসায় ব্যবস্থাপক; ভালোবাসার বদলে দেয় টার্গেট আর প্রমোশন।

কিন্তু ইসলাম?
ইসলাম যখন এসেছিল, নারী ছিল সম্পত্তির মর্যাদাহীন এক ছায়া। কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো, স্ত্রীকে ভোগ্যপণ্য ভাবা হতো। তখনই ইসলাম বলে উঠেছিল, “তোমার করুণায় লুকিয়ে আছে জান্নাতের চাবি। তোমার মর্যাদা কোনো পুরুষের করুণায় নির্ভরশীল নয়, তা স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত।”

ইসলাম তোমাকে দেয়নি কোনো শেকল। সে তোমাকে দিয়েছে পরিচয়—কন্যা, স্ত্রী, মা—প্রতিটি রূপেই পূর্ণ মর্যাদা। সে চায়নি তুমি চুপ থাকো, সে চেয়েছে তুমি গড়ো। কিন্তু সে চায়নি তোমার নারীত্বকে মুছে দিয়ে পুরুষ হয়ে ওঠা, বরং নারীত্বেই পূর্ণতা খোঁজা।

আজ যারা তোমাকে দিচ্ছে মুক্তির বুলি, তারা আসলে ছিনিয়ে নিচ্ছে তোমার আত্মার স্বর। তারা জানে, তুমি যদি নিজের পরিচয়ে অবিচল থাকো—তবে ভেঙে পড়বে সেই সভ্যতা, যা গড়ে উঠেছে নারীর ভোগ আর ব্যবহারের ওপর।

নারী, তারা চায় তুমি আলোকিত হও, কিন্তু আলোর মালিক না হয়ে শুধু বাতির নিচে দাঁড়িয়ে থাকো। তারা চায় তুমি করো, কিন্তু বুঝো না কেন করছো। তারা চায় তুমি হাসো, কিন্তু জানো না কেন কান্না আটকে আছে বুকে।

তোমার স্বাধীনতা টাকা নয়, কর্পোরেট কার্ড নয়, পোশাক নয়—তোমার স্বাধীনতা সেইখানে, যেখানে তুমি সম্মানিত, নিরাপদ, ভালোবাসায় ঘেরা। যেখানে তুমি মা, যার পায়ের নিচে জান্নাত; কন্যা, যে পিতার হৃদয়ের জ্যোতি; আর স্ত্রী, যে স্বামীর প্রশান্তি।

এই মুক্তির ভাষা কেউ শেখাবে না তোমাকে বিলবোর্ডে, কেউ বলবে না টেলিভিশনের পর্দায়। এ ভাষা শোনো নিজের অন্তরে, নিজের ফিতরায়, নিজের রবের ডাকের মধ্যে।

ফিরে এসো।
তোমার আত্মা যে চুপচাপ কাঁদে রাতের অন্ধকারে, সে ডাকে—তোমার রবই একমাত্র আশ্রয়।
এই মুখোশের বাজারে নিজেকে বিকিয়ে দিও না। তুমি নারী—তুমি রবের সৃষ্টি, তুমি তার স্নেহে পোষিত। তুমি কখনোই বন্দিনী নও, যদি তুমি চেনো কার কাছে রয়েছে তোমার প্রকৃত মুক্তি।

  • নারীর নামে নৈঃশব্দ্যের দাসত্ব: মুক্তির মুখোশে অদৃশ্য শেকল