জনপ্রিয়

তাড়াশে কাফেলার সুরে আজও ভাঙ্গে রোজাদারদের ঘুম

প্রকাশক: Dainik Jagroto Matrivumi
প্রকাশ: 1 month ago

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

মধ্যরাত দূর-দূরান্ত থেকে মাইকে ভেসে আসছে- রোজাদারো উঠো সেহরিকা ওয়াক্ত হো চুকা হে জাল্দ উঠো আওর সেহরি কারলো রোজাদাররা উঠে পড়ুন, সেহেরির সময় হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি উঠুন এবং সেহেরি করে নিন।

পুরো রমজান মাসজুড়ে তৎপরতা তাদের। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌর শহরের ঐতিহ্য এ কাফেলা তথা ঘুম থেকে জাগানিয়া দলের তৎপরতা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।

তাড়াশ পৌর শহরের সেহেরির ঘণ্টাখানেক আগে থেকে বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলিগলিতে রোজাদারদের জাগাতে এভাবে ঘুরে বেড়ায় কাফেলা। এ বছরও ব্যতিক্রম নয়।

প্রতিদিন শহরের বাঁশবাড়ি আলেফ মোড় থেকে মালেকের কাফেলা, গোডাউন মোড় থেকে আশরাফি কাফেলা, দক্ষিণপাড়া থেকে মিজানুরের কাফেলাসহ বিভিন্ন কাফেলা বিভিন্ন এলাকা থেকে বের হয়ে রোজাদারদের জাগানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

তাড়াশ পৌর শহরে আগে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় একাধিক কাফেলার দল থাকলেও কালের বিবর্তনে সংখ্যাটা এখন অনেক কম।

তবে ডিজিটাল এ যুগেও এ উপজেলায় এমন কাফেলা দলের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। পৌর শহরের তাড়াশে সেহেরির একটু আগে ঘুম ভাঙান মালেকের কাফেলা দলের সদস্যরা। রিকশায় মাইক লাগিয়ে চলে গজল গাওয়া আর ইসলামিক কবিতা পাঠ। গজল গাওয়ার মাঝে মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয় সেহেরির শেষ সময়।  

মালেক কাফেলার প্রধান জাহাঙ্গীর আলী জানান, অনেক বছর ধরে এ কাজ করে আসছেন তিনি। তাদের ডাক শুনে মহল্লার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ঘুম থেকে উঠে তাদের একনজর দেখতে বাইরে ভিড়ও করে। রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত সেহেরির জন্য প্রতিদিন রাত ২টার দিকে তারা নেমে পড়েন রোজাদারদের ডেকে তুলতে। রাত জেগে এভাবে ডেকে তোলা তাদের কাছে পরম পূণ্যের কাজ। অনেকে আবার একে সামাজিক দায়িত্ব বলেও মনে করেন।

পৌর শহরের গৃহিনী রাশিদা বেগম জানান, সেই ছোটবেলা থেকে কাফেলা দেখে আসছি। এক সময়ে ঘড়ির প্রচলন ছিল না। সে কারণে রোজদারদের সেহেরি করতে অসুবিধা হতো। সেই সময় থেকে এ কাজ শুরু হয়। মূলত কিশোরদেরই এ কাজ করতে দেখা গেলেও এখন বয়স্করাও এ কাজ করছেন।  

শহরের গোডাউন মোরের মাহাফুজা বেগম জানান, ছোট বেলায় বাবা-মা বয়স কম বলে রোজা রাখতে দিতেন না। কিন্তু এ কাফেলার হাঁক ডাক শুনে ঠিকই ঘুম ভেঙে খাবার টেবিলে যোগ দিতাম। যদিও গত বেশ কয়েক বছর কাফেলার হাঁক ডাক খুব কমে গেছে।

আলেফ মোড়ের বাসিন্দা সাগর হোসেন জানান, রমজান মাস এলেই প্রতিরাতে কাফেলার গজলে ঘুম ভাঙ্গে। ঘণ্টা খানেক আগে থেকেই তারা ঘুরে ঘুরে সেহেরি খাওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু এখন সব কিছু কেমন যেন পানসে হয়ে গেছে।

কাফেলার সদস্যদের কোনো নির্দিষ্ট চাহিদা নেই। খুশি হয়ে যে যা পারেন টাকা দেন। কেউ কেউ প্রতিদিন খুশি হয়ে অল্প কিছু টাকা দিয়ে থাকেন কাফেলার সদস্যদের। আবার অনেকে একবারে ঈদের আগে কিছু টাকা দেন। এতে রমজান মাসে একেকটি কাফেলার আয় হয় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো।  

সেই দিনগুলো এখন শুধুই অতীত। তাড়াশে এখন আর আগের মত ঘুম ভাঙ্গানো কাফেলা দলের গজল শোনা যায় না। ডিজিটাল প্রযুক্তির এ যুগে এখন মোবাইল ফোনের  অ্যালার্মে তাদের ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু তাড়াশ পৌর শহরের বাসিন্দারা আজও কাফেলা তথা ঘুম জাগানিয়া দলের সুরেলা ডাকে জেগে ওঠেন।

  • তাড়াশে কাফেলার সুরে আজও ভাঙ্গে রোজাদারদের ঘুম