অনলাইন ডেস্ক.
কিছুদিন আগে চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের মধ্যে টানা পোড়ন স্পষ্ট হয়। এবার তাকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশ করেছে আমার দেশ। পত্রিকাটির হেডলাইন ‘চন্দন থেকে গেরুয়া সন্ত্রাসী চিন্ময়’। যেখানে বলা হয় বাবা-মায়ের দেওয়া নাম চন্দন কুমার ধর। উগ্র ধর্মীয় সংগঠন ইসকনে যোগদানের পর নাম হয় চিন্ময় কুমার দাস ব্রহ্মচারী। ভক্তরা তাকে ডাকেন চিন্ময় প্রভু নামে। সন্ধারানী ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা মৃত মাস্টার আশুতো ধরের ছেলে তিনি। ১৯৮৫ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে স্ট্রোক করে মারা যান আশুতোষ ধর। ওই দিনই জন্ম হয় চিন্ময়ের। আমার দেশ পত্রিকার বর্ণনা মতে, জন্মের সময়ে বাবার মৃত্যুতে গ্রামের মানুষের কাছে অপয়া সন্তান হিসেবে পরিচিতি পায় চন্দন। পরে সাতকানিয়া থেকে বন্দর নগরীতে আসেন চিন্ময়ের পরিবার। চট্টগ্রামের ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকা অবস্থায় হঠাৎ একদিন জানা গেল তিনি সন্ন্যাসী হয়েছেন, পরের গন্তব্য বিতর্কিত ইসকন। গেরুয়া বেশে উগ্র তৎপরতায় অল্প সময়ের মধ্যেই ইসকনের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। তবে তিনিই নাকি ছিলেন সংগঠনটির সর্বসভা।
আমার দেশ বলছে, জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার নীল নকশা হাঁটে দিল্লি। যার দায়িত্ব পান ইসকন নেতা চিন্ময়। সাধারণ সংখ্যালঘুদের মাঠে নাম সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট নামের আরেকটি সংগঠন খুলে বসে চিন্ময়। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার কথা উল্লেখ করে পত্রিকাটি জানায় ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস এর পরিকল্পনায় ভারতপন্থী আরো কয়েকটি সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে নতুন এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটানো হয়। যার সমন্বয় করছেন ভারতে পালিয়ে থাকা পতিত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আমার দেশ জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ বানাতে সক্রিয় ছিলেন তথাকথিত ধর্মীয় গুরু চিন্ময় ওরফে চন্দন। সেই লক্ষ্যে সরকার পতনের পরপরই তিন মাসে অন্তত ১৫ টি বড় সমাবেশ করে হিন্দুদের উসকে দেন তিনি। এসব সমাবেশের বেশিরভাগই মহিবুল হাসান চৌধুরীর ঘাটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের জামালখান থেকে লালদিঘি পর্যন্ত এলাকায়। সমাবেশে গেরুয়া বেশি অংশ নেয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারাও। মানুষের ভিড়ে এসব কর্মসূচিতে বিভিন্ন ধরনের উস্কানি দেওয়ার পাশাপাশি নাটক সাজিয়ে তিলকে তাল বানিয়ে সেগুলো ভিডিও করে পাঠিয়ে দেওয়া হতো ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। পত্রিকাটি বলছে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মূলত ইসকনের কার্যক্রম বড় পরিসরে শুরু হয়। বাংলাদেশে কাজের সুবিধার্থে কয়েকটি পুরনো মন্দির দখল নেওয়া সহ চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে ইসকন। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসে কর্মরত হিন্দু সম্প্রদায়ের কর্মকর্তা তাদের টার্গেট করে চলে সদস্য সংগ্রহের কাজ। একটি গোয়েন্দা সংস্থা শুধু চট্টগ্রাম বন্দরে ইসকনের ৫০ সদস্যের তালিকা সংগ্রহ করেছে। আমার দেশকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত এএলএম ফজলুর রহমান জানান, ইসকনের তৎপরতা চট্টগ্রাম ও রংপুর কেন্দ্রিক বান্দরবানের সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ এর নাথান বোম আশ্রয় প্রশ্রয় ও অস্ত্র পাচ্ছে ভারত থেকে। চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের নিয়ন্ত্রণ পেলে মিজোরামের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে ভারতের। অন্যদিকে রংপুর নিয়ন্ত্রণে এলে চিকেন নেকের সঙ্গে তাদের যোগাযোগটা সহজ হয়। মূলত এই টার্গেটেই মাঠে নেমেছে ইসকন। এই দুই জায়গায় বিপুল পরিমাণ জমিও কিনেছে সংগঠনটি। যা তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক। তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে ভারতের এই পরিকল্পনা ভেজতে গেছে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে এর মধ্য দিয়ে। আর তাই প্ল্যান বি’র অংশ হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে চট্টগ্রামকে। কারণ চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র নওফেলের নির্বাচনী এলাকা ঘিরে অন্তত ৫৪ হাজার সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। যাদের মধ্যে জামাল খান, বান্ডেল কলোনি, আন্দোর কিল্লা, কোতুয়ালি এলাকায় রয়েছে ইসকনের শক্ত অবস্থান। সেজন্য সরকার পতনের পর তারা চট্টগ্রামকে বেছে নেয়। অস্থিরতা তৈরির কী পয়েন্ট হিসেবে বলা হয় এটিকে। গত দুর্গাপূজায় ইসলামী একটি সাংস্কৃতিক সংস্থার কর্মীদের ডেকে নিয়ে মঞ্চে তুলে ইসলামী গান পরিবেশনের ঘটনাটিও ছিল ধুরন্ধর ইসকনের উটচাল। আমার দেশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কথিত সনাতন জাগরণী জোটের কর্মসূচিতে জাতীয় পতাকার অবমাননার পর বিএসএফ এর বাংলাদেশীদের খুন হওয়ার ঘটনায় ভারতের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান করেছে চিন্ময়। পত্রিকাটি জানায় চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে অন্তত ১০ শিশুকে ধর্ষণ ও বলাৎকারের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামের হাজারীগলিতে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের উপর চিন্ময়ের নির্দেশে অ্যাসিড নিক্ষেপ ও আইনজীবী আলিফ হত্যার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।