স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকার সাভারে ফামের্সী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামে কথিত একটি সংগঠনের আড়ালে চলছে নীরব চাঁদাবাজী ও নিরীহ ফার্মেসী মালিকদের সাথে প্রতারনা। এই সংগঠনের মহাসচিব পরিচয় দানকারী সোনাম উদ্দিন ওরফে সোহেল। সাভার বাজার রোডে একটি ভবনের চতুর্থ তলায় ফ্লাট ভাড়া নিয়ে এই প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন। তাদের রয়েছে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি গ্রুপ। তারা যেখানেই যায় ডিবি পুলিশের মতো পোশাক করে যায়। হঠাৎ কেউ দেখলে বুঝতেই পারবে না তারা কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নয়, আসলে তারা প্রতারক। তারা গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন ফার্মেসীতে তাদের দালালদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে নিরীহ প্রকৃতির ফামের্সী মালিকদের টার্গেট করে। পরে তাদের ড্রাগ লাইসেন্স করে দিবে, কোন ঝামেলা হলে সংগঠন দেখবে আবার ডাক্তারের ট্রেনিং দিয়ে সার্টিফিকেট দিবে। এস করলে বেশি মুনাফা হবে এমন আশ্বাস দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেকে তাদের প্রতারনার বিষয়ে মুখ খুললেও আনেকে ভয়ে কিছু বলতে রাজী হচ্ছে না। তবে ফামের্সী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামে কথিত একটি সংগঠনের চাঁদাবাজী ও প্রতারনা বন্ধের দাবী জানিয়েছেন অনেকে ভুক্তভোগী। সাভারের জয়নাাড়ি এলাকার জীবন ফামের্সির মালিক রুনা খাতুন বলেন, সোহেল ফাস্ট এইড মেক্যিাল ইনস্টিটউট নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্টান করে আমাকে তার এক সহকারীর মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে ট্রেনিং করায়। শিশু হাসপাতালের অডিটরিয়ামে ৩মাসের কোর্সের কথা বলে ৩দিনের ট্রেনিং করিয়ে ৬হাজার টাকা নিয়েছে। সপ্তাহে সপ্তাহে বিভিন্ন সার্টিফিকেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। যা ছিল সবই ভূয়া। এমনকি ড্রাগ লাইসেন্স করে দিয়ে ৪০হাজার টাকা নিয়েছে সোহেল। পরে যাচাই করে দেখি সেই ড্রাগ লাইসেন্সটিও ভূয়া। সব মিলে প্রতারক সোহেল বিভিন্ন সময় আমার কাছ থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেন তিনি। সোহেলের সাথে বাশারও ছিল। সাভার হেমায়েতপুর এলাকার সরকার মেডিক্যাল কর্ণারের মালিক আব্দুল আজিজ বলেন, ফার্মেসী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামে একটি কথিত সংগঠনের মহাসচিব সোহেল রানার সহযোগী গৌতম সেন আমার ফামের্সীর ড্রাগ লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ১৪হাজার টাকা নিয়েছে। দীর্ঘদিন পর একটি লাইসেন্স আমাকে ধরিয়ে দিলেও পরে যাচাই করে দেখি সেটা ভুয়া লাইসেন্স। পরে টাকা ফেরত চাইলে নানাভাবে হুমকি ধমকি দেয়। তিনি আরও বলেন, সোহেল রানা তার সংগঠন ফার্মেসী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের হেমায়েতপুর শাখার সভাপতি বানাবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা চেয়েছিল। পরে তার প্রতারনার বিষয় জানতে পেরে তার ফাঁদে পা দেইনি। তবে তিনি টাকা নিয়ে ভুয়া ড্রাগ লাইসেন্স দেয়ার বিষয়ে থানায় অভিযোগ করবেন বলেও জানিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে গৌতম সেন বলেন, আমি আগে ফার্মেসী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সাভার উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। এই সংগঠন করতে গিয়ে রাস্তাঘাটে মানুষ আমাকে ‘চিটার-বাটপার’ বলে, তাই সংগঠনের ওই পদ থেকে সরে এসেছি। টাকার বিনিময়ে ভুয়া ড্রাগ লাইসেন্স দেয়ার বিষয়ে বলেন, ওই ফার্মেসী মালিক যে কাগজপত্র দিয়েছিল তা সংগঠনের অফিসে জমা দিয়েছি। তারাই লাইসেন্স দিয়েছে। তিনি বলেন, অন্য আরেকজন ফার্মাসিস্টের কাগজ দিয়ে আব্দুল আজিজের ড্রাগ লাইসেন্স করে দিছিলাম। তবে তা জালিয়াতি ছিল বলে স্বীকার করেন। আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার চিত্রাসাইল মহল্লায় ফামের্সী দোকানী মৃদুলা বলেন, ফার্মেসী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামে কথিত প্রতিষ্ঠানের মহাসচিব সোহেলকে আমি ভাই বলে ডাকতাম। সেই ভাই আমার ফামের্সীর ড্রাগ লাইসেন্স করে দেয়ার কথা বলে প্রথমে ৫হাজার পরে আরও ১০হাজার টাকা নেয়। দীর্ঘদিন হওয়ার পরেও লাইসেন্স না পাওয়ায় সংগঠনের সাভারের অফিসে যাই। সেখানে গেলে তারা লাইসেন্স দিবে তবে আরও ৫হাজার টাকা দাবী করে। পরে টাকা ফেরত চাইলে ফেরত দেয়নি। টাকাটা আমার খুব কষ্ট করে যোগাড় করে দিয়েছিলাম। রাগে ক্ষোভে সোহেলের সাথে আর কোন যোগাযোগই করিনি। সেও টাকা ফেরত কিংবা ড্রাগ লাইসেন্স করেও দেয়নি সে। মৃদুলা আরও বলেন, আমারমতো অনেকেই সোহেলকে ড্রাগ লাইসেন্স করার জন্য টাকা দিয়ে প্রতারনার শিকার হয়েছে। ফার্মেসী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামে কথিত প্রতিষ্ঠানের মহাসচিব সোনাম উদ্দিন ওরফে সোহেল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রুনার ড্রাগ লাইসেন্স আমি করে দিছি। ড্রাগ লাইসেন্স করতে ২০০০ থেকে ২৫০০টাকা খরচ হয়। কিন্তু এই টাকা দিয়েতো কেউ লাইসেন্স করতে পারবে না। তবে ড্রাগ লাইসেন্স করতে রুনার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নেইনি। এছাড়া রুনা আমার বিরুদ্ধে আরও যে সব অভিযোগ তুলেছে সবই মিথ্য। মৃদুলার কাছ থেকেও লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে কোন টাকা নেয়নি।