জনপ্রিয়

শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি চান পলক?

প্রকাশক: Dainik Jagroto Matrivumi
প্রকাশ: 8 hours ago

অনলাইন ডেস্ক.

জুলাই বিপ্লবের সময় চাইলেই দেশ ত্যাগ করতে পারতেন, কিন্তু দলীয় প্রধানের জন্য থেকে গেছেন দেশে এমনই কথা বলা সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবার সুর পাল্টে বলছেন ভিন্ন কথা। যার জন্য দেশে থেকে গেছেন সেই শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি চান বলে একের পর এক সাক্ষী দিয়ে যাচ্ছেন পলক।

কোটা বিরোধী থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন সময় গড়িয়ে রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। অবশেষে গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় সরকারের। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচুত্ত হয়ে পালিয়ে ভারতে যেতে সক্ষম হলেও অনেকেই দেশ ত্যাগে ব্যর্থ হন। পালাতে ব্যর্থ আওয়ামী লীগ নেতারা।  আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে করছেন কারাবাস। বিচারাধীন থাকা এসব নেতারা। বিগত সরকারের আমলের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ছিলেন এসব নেতাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।

আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে আলোচনায় আসেন তিনি। জানা যায় আন্দোলন দমাতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে অবস্থা যখন বেগতিক তখন হাসিনাকে ছেড়ে না যাওয়া পলক এবার সব দায় চাপাচ্ছেন শেখ হাসিনার উপর। এবার নিজ দলীয় প্রধান হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর এক সাক্ষী দিয়ে চলেছেন পলক।

আদালতে দাঁড়িয়ে এবার ইন্টারনেট কান্ডের গোমর ফাঁস করলেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দায় চাপালেন শেখ হাসিনার উপর। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তদন্ত সংস্থার কাছে স্বীকারক্তি দিয়েছেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।

গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনার সরকার যখন বেকায়দায় পড়ে যায় তখন এক নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক স্বার্থে এবং জন উশৃঙ্খলার অভিযোগ এনে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট। অথচ ইন্টারনেট বন্ধ করে নির্বিচারে হত্যা করা হয় ছাত্রজনতাকে।

ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা এটাই প্রথম নয় এর আগেও ২০২৩ সালে তিনবার এবং ২০২২ সালে ছয়বার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। তবে গোটা আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার এসময় ফেসবুক ইউটিউব সহ বন্ধ করে দেওয়া হয় সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কার্যত ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাত থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেওয়া হয় পাঁচ দিন পর ২৩ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত পরিসরে ফিরে, আর ১০ দিন পর ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়। কিন্তু বন্ধ ছিল মেটার প্লাটফর্ম ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসএপ ও ইনস্ট্রগ্রাম। এছাড়া টিকটক ও বন্ধ রাখা হয়। অন্যদিকে ব্রডব্যান্ড সংযোগে ইউটিউব চালু থাকলেও মোবাইল ডাটায় তা বন্ধ রাখা হয়।

জুলাই বিপ্লবে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা নিয়ে পলক একেক সময় একেক রকম তথ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রথমে পলক জানায় অবকাঠামোয় আগুন দেওয়ায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছে। আরেক সংবাদ সম্মেলনে পলক জানায় ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি একাই বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের এমন মিথ্যা এবং কল্পিত অজুহাত জনগণ বুঝতে পারলেও কিছু বলতে পারেনি, কারণ তখনও ক্ষমতার ছড়ি তাদের হাতেই ছিল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি পতিত শেখ হাসিনা সরকারের। বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার গণ অভ্যুত্থানের স্রোতে ভেসে যায় তিলে তিলে গড়ে তোলা আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের সিংহাসন। ক্ষমতার মসনদের আশা ছেড়ে আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা সব নেতারা যখন দেশ ছেড়ে পালাতে ব্যস্ত তখন হাসিনাকে ছেড়ে যায়নি পলক। কিন্তু পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিতে স্ত্রী সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বিদেশে। তবে পলকদের রেখে হাসিনাই যখন পালিয়ে যান তখন চুপসে যান সব নেতাকর্মীরা। অবশেষে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় বিমানবন্দরে আটক হন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। জানা যায়, জেলহাজতে তার রিমান্ডের ধক্কলে অনেক কেঁদেছেন পলক। হাসিনার পালানোর চার মাস পার হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার কোন সম্ভাবনা যখন দেখছেন না পলক, আনিসুল, সালমান এফ রহমানরা। তখন একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তারা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জানাচ্ছেন অজানা নানা ভয়ঙ্কর সব তথ্য। সবাই কমবেশি দায় চাপাচ্ছেন হাসিনার বিরুদ্ধে। ক্ষমতার লালসা পেয়ে বসেছিল হাসিনাকে এমন কথাই বলছেন সবাই। তবে সবচেয়ে বেশি দায় চাপাচ্ছেন পলক আর সাবেক আইজিপি মামুন। কাঠ গড়ায় দাঁড়িয়ে আনিসুল পলকরা হাসিনার বিরুদ্ধে যে সাক্ষী দিয়ে চলেছে তাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার যে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে তা নিশ্চিত বলে জানাচ্ছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।