রাবি প্রতিবেদক: দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে দূর্ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পরিক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের এক উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে। রবিবার (৯ মে) সার্টিফিকেট বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে দূর্ব্যবহারের পাশাপাশি মারতে উদ্যত হন বলে অভিযোগ ওই শিক্ষার্থীদের। অভিযুক্ত আবু হেনা মো. মোস্তফা কামাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে আছেন। মূল সার্টিফিকেটের বিষয়টি তত্বাবধান করেন তিনি। অন্যদিকে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা হলেন- আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান গাজি মহারাজ ও মো. মারুফ হাসান। এঘটনায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অন্যতম ভুক্তভোগী মহারাজ। অভিযোগ পত্রে মহারাজ লিখেছেন, আজ সকালে সনদ উত্তোলন করতে গেলে জানানো হয়, সনদ প্রস্তুত হয়েছে, তবে কাগজ সঙ্কটের কারণে প্রিন্ট হয়নি। এবিষয়ে কর্মকর্তা আবু হেনা মো. মোস্তফা কামালের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়। আমি উনার কাছে গিয়ে সার্টিফিকেট এর কাগজ না থাকার কারণ এবং কবে নাগাদ পেতে পারি তার সম্ভাব্য তারিখ জানতে চাইলে, তিনি আমার প্রতি ক্ষুদ্ধ হন এবং কোনো প্রশ্নো উত্তর দিতে বাধ্য নন বলে জানান। তখন আমি বলি, ‘অফিস থেকে তথ্য প্রাপ্তির জন্য আপনার কাছে পাঠানো হয়েছে বিধায় আমি জানতে চাই, কাগজ কবে আসবে?’ এমতাবস্থায় তিনি চেয়ার থেকে উঠে এসে আমাদেরকে মারতে উদ্যত হন এবং উনার অফিস থেকে বের করে দেন। কর্মকর্তাদের কী ধরনের দায়িত্ব পালনের জন্য ঐ দপ্তরে রাখা হয়েছে? দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণ কী? শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের সাথে জড়িত কর্মকর্তা বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক। অন্যথায় আমরা আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবো। এসময় রেজওয়ান গাজি মহারাজের সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু মারুফ হাসান। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, আজ এক বড় ভাইয়ের সার্টিফিকেট এর মূল কপি সংগ্রহ করার জন্য আমরা প্রশাসনিক ভবনে গিয়েছিলাম। এক অফিসার বললেন, সার্টিফিকেট লেখার কাগজই নাকি নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি আরো লিখেছেন, কাগজ কবে আসবে জানতে চাইলে ডেপুটি কন্ট্রোলার মোস্তফা কামাল সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়। কামাল সাহেবের অফিসে গিয়ে নম্রভাবে জানতে চাইলাম যে, কাগজ কবে আসতে পারে? তিনি উত্তর না দিয়ে উল্টো চেয়ার থেকে উঠে আমাদেরকে মারতে উদ্যত হন। তার অভিযোগ, তার কাছে কেন জানতে চাওয়া হবে এগুলো? পরে অফিসের কয়েকজন বললেন, তার মাথায় নাকি সমস্যা আছে। তাহলে, একজন মানসিক রোগীকে কেন এতবড় দায়িত্ব দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে? এবিষয়ে আবু হেনা মো. মোস্তফা কামালের বক্তব্য জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আলমগীর হোসেন সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে, তার নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়। ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, ঘটনাটি আমিও জেনেছি। অভিযোগকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ঘটনাটির সূত্রপাত সার্টিফিকেট ছাপানোর কাগজ না থাকা নিয়ে। এবিষয়ে আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি বললেন, ‘আগামী প্রায় দশবছরের সার্টিফিকেট ছাপানোর মত কাগজ নাকি রয়েছে ওনাদের কাছে।’ হয়তে কোনো কারণে কথা কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু আবু হেনা ভাইকে ঠান্ডা মেজাজের মানুষ হিসেবেই আমরা জানি। ঘটনা যাইহোক, এবিষয়ে আগামীকাল আমি দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটা সমাধান করে দিবো। এরকম ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে, আমি ব্যবস্থা নিতে পারি। তিনি আরো বলেন, এর আগে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে একটা সিন্ডিকেট ছিলো।ইন্ডিয়ান এক ছেলের মার্কশিট তুলতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ওইটার তদন্ত কাজ চলছে। এরপর থেকে মোটামুটি ভালোই চলছে দপ্তরটি। তারপরও শিক্ষার্থীদের কারো কোনো অভিযোগ থাকলে, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তারিফুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়