রাকিবুল হাসান, (সাতক্ষীরা) শ্যামনগর প্রতিনিধিঃ সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় মাটি ভরাট করে কৃত্রিমভাবে উঁচু টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ‘বাঘের টিলা’। বাঘ সাধারণত উঁচু স্থানে থাকতে পছন্দ করে। আর প্রজনন মৌসুমে তারা সবসময় উঁচু স্থান বেছে নেয়। বর্ষার মৌসুমে ভরা জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসের সময় যখন পানির উচ্চতা বাড়ে, তখন এই ম্যানগ্রোভ বনের অনেক প্রাণী ভেসে যায়।এসব বাঘের টিলা শুধু বাঘকেই সুরক্ষা দেবে না, বরং বাঘ যেসব প্রাণী খেয়ে থাকে, তেমন ছয়টি প্রাণীকেও সুরক্ষা দেবে। পাশাপাশি প্রতিটি টিলার পাশে একটি করে মিঠাপানির পুকুরও খনন করা হচ্ছে, যাতে সেখান থেকে বন্য প্রাণীরা পানি পান করতে পারে।প্রজনন পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে বিপন্নের ঝুঁকিতে থাকা বাঘের সংখ্যা বাড়াতে বাংলাদেশের সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে ১২টি কৃত্রিম টিলা তৈরি করছে বন কর্তৃপক্ষ। জায়গাগুলো হলো- সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের নীল কমল, পাটকোস্ট, ভোমরখালী, পুস্পাকাটি, মান্দারাড়িয়া ও নোটাবেকী এলাকায় এসব টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে পূর্ব বন বিভাগের চাদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের কটকা, কচিখালি, কোকিলমুনি, সুপতি, টিয়ারচর ও দুধমুখি অংশও টিলা নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় যুক্ত হচ্ছে।ইতিমধ্যে সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রে একটি বাঘের টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে বা হয়ে গেছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে টিলাগুলো হবে বাঘের প্রজননে একটি আদর্শ জায়গা এবং এটি বাঘের বংশ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর মা বাঘ কখনোই শাবকদের একা রেখে কোথাও যেতে চায় না। টিলার পাশে মিঠাপানির পুকুর থাকায় পানি খাওয়ার জন্য বাঘের অনেক দূরে যেতে হবে না। বাঘ ছাড়াও প্রাণীটির খাবার যেমন চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, সজারু ও গুইসাপের বসবাসে সহায়ক হবে এসব টিলা। বন বিভাগের মতে, সুন্দরবনে যেসব জায়গায় বাঘের আনাগোনা বেশি, সেসব জায়গায় এসব টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, তাই উচ্চ জোয়ারের সময় বন্যপ্রাণীদের ভেসে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। এসব উঁচু টিলার কারণে বন্যপ্রাণীরা উপকৃত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১২টি টিলা নির্মাণ না করে, প্রাথমিকভাবে দুয়েকটি টিলা নির্মাণ করা উচিত ছিল। সেটি পর্যবেক্ষণ করে গবেষণার মাধ্যমে জানা দরকার ছিল এটি উপকার করবে কি না। যদি উপকারে আসত, তাহলে বেশি করে টিলা নির্মাণ করা উচিত ছিল।’ ২০২২ সালের ২৩ মার্চ সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এর ব্যয় ধরা হয় আনুমানিক ৩৬ কোটি টাকা। টিলা গুলো এই প্রকল্পের আওতায় তৈরি হচ্ছে। তবে একটা কথা বলে রাখা ভালো, কটকা বন বিভাগের অফিস এবং রেস্ট হাউজের ঘাটের যে রাস্তা বনের দিকে গেছে, সেখানে কিছুক্ষণ হাঁটলেই পড়ে ‘টাইগার টিলা’। এই জায়গাটি আশপাশের অন্যান্য জায়গা থেকে একটু বেশি উঁচু এবং সুন্দরী গাছের ঘন জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত। অধিক জোয়ারে কিংবা বন্যাতেও সহজে পানি উঠে না এখানে। ফলে পরিস্থিতি বুঝে বাঘ আশ্রয় নিতে পারে। বাঘ বন থেকে হরিণ শিকার করে এনে এখানে বসে খায়, পর্যটকরাও মাঝেমধ্যেই এখানে হাঁড় মাংস খুঁজে পায়।অনেক সময় বাঘের ঝলক দেখতেও পাওয়া যায়। সম্ভবত কটকার এই টাইগার টিলার ধরনকে ভিত্তি করেই কৃত্রিম এই টিলা গুলো বানানো হচ্ছে।