প্রতিবেদক: মোঃ হাবিব
আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন বেপরোয়া হচ্ছে নদী দখলদ্বাররা। নদী দূষণকারী ও দখলদারদের কোনো শাস্তি হয়েছে এমন নজির নেই। নদী রক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও দৃশ্যমান কাজ না হওয়ায় সাদেশের মতো ঠাকুরগাঁওয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না নদ-নদীর অবৈধ জমি দখল। এমতাবস্থায় অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে নদী। এক শ্রেণির সুবিধাভোগীর হস্তক্ষেপে দখলি জমিতে নতুন নতুন বসতভিটা, দোকানপাট ও শিল্প-কারখানা গড়ে তোলায় দিন দিন নদীর গতিপথ বন্ধ হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে নদী অচিরেই হারাবে তার চিহ্ন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁও জেলার ১৩টি নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৯১ কিলোমিটর। আর তালিকাভুক্ত ৪৬০ জনের দখলকৃত জমির পরিমান সাড়ে সাত একর। অভিযান পরিচালনা করে ১৩৩ জনের দখলকৃত জমি উদ্ধার হয়েছে প্রায় তিন একর। দখলকারীদের কবলে পড়ে নদী হারিয়েছে জীবন্ত সত্তা। ঝুঁকিতে পড়েছে পরিবেশ। নদীদূষণসহ অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় মূল নদীর প্রবাহ অত্যন্ত সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এভাবেই হত্যা করা হচ্ছে নদীগুলোকে। যেন দেখার কেউ নেই। নদীরক্ষা আইন আছে, রয়েছে কঠোর শান্তির বিধানও। কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকায় বেপরোয়া হচ্ছে দখলকারিরা। নদীর গতিপথ ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকলেও কার্যত পদক্ষেপ নেই পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের। আর বছরের পর বছর এমন অবস্থা চলতে থাকায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টের পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়ছেন স্থানীয় জেলেরা। জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা টাঙ্গনের মত প্রতিটি নদীই এখন ধু-ধু বালুচর। বর্ষা কিংবা খরা মৌসুমে পানি শুকিয়ে জেগে উঠছে চর। টাঙ্গন, শুক ও সেনুয়াসহ ১৩টি নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবৈধ দখলদারদের মাধ্যমে দিনের পর দিন গড়ে তোলা হচ্ছে বসতভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় দখল আর সময়-অসময়ে অপরিকল্পিত খননে কোনোভাবেই প্রাণ ফিরছে না এসব নদীর। চর জেগে ওঠায় দিন দিন গতিপথ বন্ধের পাশাপাশি ছোট হয়ে আসছে নদীগুলোর সীমানা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠছে দখলদাররা।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিনিয়ত নদীর জমি দখল হতে থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেন না পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। ফলে দিন দিন নদীর সীমানা ছোট হয়ে পরিণত হচ্ছে মরা খালে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদী অচিরেই নিশ্চিহ্ন হবে। তারা আরো জানান, এরই মধ্যে বেশকয়েকটি নদীর জমি দখলকৃতদের তালিকা প্রণয়ন করেছে। বাস্তবতা বিবেচনায় দিনের পর দিন দখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার এখন জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। পরিবেশবাদীরা বলছেন, নির্দেশনা ও সুপারিশ বাস্তবায়নে বড় আকারের কার্যকর উদ্যোগ নেই। দেশের নদ-নদী অব্যাহতভাবে দখল হয়েছে, হচ্ছে। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-নিরক্ষর, রাজনীতিক-ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি-সাধারণ মানুষ-সমাজের প্রায় সর্বস্তরের সব শ্রেণিপেশার মানুষ অবৈধভাবে নদী দখলের সাথে যুক্ত। নদী রক্ষার জন্য সরকার কমিশন গঠন করলেও তারা উল্টো দখলদার ও দূষণকারীদের পক্ষে কাজ করেছে বলে অভিযোগ তাদের। আর তালিকা ধরে দখলকৃত জমি উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে কয়েকটি কমিটির বৈঠকের সিন্ধান্ত অনুযায়ী সব জমি উদ্ধারে দ্রুই তই ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান, ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম যাকারিয়া।