আব্দুল্লাহ আল মারুফ, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ):সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার ফুটবল খেলার জেরে লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের পুত্র আকবর আলী (৩৫)’কে’ হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৬ আগষ্ট) বিকালে উপজেলার লক্ষিপুর ইউনিয়নের স্থানীয় এলাকাবাসীর ব্যানারে লক্ষিপুর গ্রামে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।এর আগে শুক্রবার সন্ধা সাড়ে ৭ টার দিকে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে লিয়াকতগঞ্জ লক্ষিপুর বাজারে ছুরিকাঘাতে হত্যার স্বীকার হয় লক্ষিপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের পুত্র আকবর আলী (৩৫)। পাশবর্তী জিরারগাঁও গ্রামের আব্দুল মতিনের পুত্র জাকারিয়া (২০) এবং ভাতিজা স্থানীয় যুবলীগ নেতা রিপন মিয়া (৩০) প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর আহত করে লক্ষিপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের পুত্র আকবর আলীকে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সাড়ে ৮ টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্য ঘোষণা করেন। এর আগে নিহত হয় জিরাগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরঙ্গনা কাকন বিবির মেয়ের জামাই ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মন্নানের পুত্র আব্দুল মতিন (৪৫)। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, শুক্রবার বিকাল ৪ টার দিকে স্থানীয় লক্ষিপুর গ্রামের যুবকদের মধ্যকার খেলায় একটি গোল হওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের বাকবিতণ্ডা হয়। এতে লক্ষিপুর গ্রামের নিহত মতিন মিয়া’র পুত্র জাকারিয়া (২০) উত্তেজিত হয়ে একই গ্রামের কেরামত আলী’র পুত্র কবির মিয়া (২২) এবং নজির আলী’র পুত্র সাহানুর মিয়া (১৮)’কে’ কিলঘুষি মারে। উপস্থিত লোকজন বিষয়টা মিমাংসা করে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর একই গ্রামের হুসন আলী (বতাই) মিয়া’র ছেলে আইয়ুব আলী (৩০) নিহত মতিন মিয়া এবং তার আত্মীয় স্বজনকে উস্কানি দেয় যে, জাকারিয়াকে মো: ফারুক মিয়া,কবির মিয়া এবং সাহানুর নামে লোকজন মারধর করছে। পরে মতিন মিয়া রাগান্বিত হয়ে স্থানীয় লিয়াকতগঞ্জ বাংলাবাজার থেকে উত্তেজিত হয়ে দৌড়ে আসতে চায় লক্ষিপুর খেলার মাঠে। সেই মুহুর্তে রাস্তায় মুক্তিযোদ্ধা হেলাল খসরু হাই স্কুল( লক্ষিপুর) সামনে আসলে দেখা হয় অভিযুক্ত সাহানুর মিয়া’র সাথে। দু’জন সামনা সামনি মুখোমুখি বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে মতিন মিয়া জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরে ওই গ্রামের অল্পত মিয়া, লোকমান মিয়া, টুকু মিয়া এবং ময়না মিয়া বিষয়টি দেখতে পেয়ে লোকমান মিয়া দৌড়ে গিয়ে মতিন মিয়াকে উদ্ধার করে লিয়াকতগঞ্জ বাজারে একটি ফার্মেসীতে নিয়ে গেলে দেখা হয় নিহত আকবর মিয়া এবং উমর মিয়া’র সাথে। পরে উভয়েই ধরাধরি করে মতিন মিয়াকে বাজারের একটি ফার্মেসীতে নিয়ে গেলে সেখানের পল্লী চিকিৎসক দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে বলে। সন্ধা সাড়ে ৭ টার দিকে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মতিন মিয়া’র মৃত্যুর ঘটনা শুনার পর নিহতের ছোট ভাই আব্দুল কাদির (৪৫), নিহতের ছেলে জাকারিয়া (২০) এবং ভাতিজা লক্ষিপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য রিপন মিয়া (৩০).কে নির্দেশ করে যে, যারা জাকারিয়াকে মারধর করছে এই গ্রামের কবির মিয়া (২২)কে’হত্যা করে ভাইয়ের বদলা নিতে। এমন সময় জাকারিয়া ও রিপন মিয়া লক্ষিপুর গ্রামের কবির মিয়া’কে মারতে গেলে সুর চিৎকার শুনে নিহত আকবর মিয়া এবং তার সাথে বাজারে থাকা লোকজনরা বিষয়টা দেখে মিমাংসা করার প্রস্তাবে এগিয়ে আসে। এসময় জাকারিয়া উত্তেজিত হয়ে বলে কোন মিমাংসা নাই,যে মিমাংসা করতে আসে তাকে ধরেই বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিবে,এমন কথা বলা মাত্রই একদিকে জাকারিয়া নিহত আকবর মিয়াকে ঝাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দেয় এবং রিপন মিয়া বুকে বসে ম দাঁড়ালো চায়নিছ ছুরি দিয়া বুকের বাম পাশে আঘাত করে। ছেলে আকবর মিয়া’কে ছুরি দিয়ে আঘাত করার বিষয়টি পাশের একটি দোকানে বসে দেখতে পেয়ে তার পিতা আব্দুল মান্নান (৫৫) দৌড়ে উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে আসতে চাইলে জাকারিয়া এবং রিপন মিয়া বৃদ্ধ আব্দুল মান্নানকে কিল-ঘুষি মেরে আহত করে। কিল-ঘুষিতে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পরে থাকে আব্দুল মান্নান।পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন চৌধুরীর এবং স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করেএকটি ফার্মেসিতে নিয়ে গেলে ফার্মেসির পল্লী চিকিৎসক দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠিয়ে দেয়। সেখানে গেলে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক আকবর মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।এতে শনিবার বিকালে লক্ষিপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের পুত্র কবির মিয়া’কে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনেবক্তব্য রাখেন, নিহতের স্ত্রী সুফিয়া আক্তার, ছোট বোন হেপি বেগম (২২),লক্ষিপুর গ্রামের সুনাফর আলী’র পুত্র রাজ্জাক মিয়া ( ২৫), আকরম আলী’র পুত্র শফিক মিয়া (৩৫),মুক্তার আলীর পুত্র ময়না মিয়া (২৫). রশরাই গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা জলিল মিয়া (৭০)। এসময় এলাকার শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা উপস্থিত ছিলেন। এঘটনায় নিহত আকবর আলী’র ছোট ভাই -জাবেদ মিয়া (১৮) এবং নিহত মতিন মিয়া’র পুত্রজাকারিয়াকে শনিবার দুপুরে আটক করেছে দোয়ারাবাজার থানা পুলিশ।দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিহত দু’জনের মরদেহ ময়না তদন্তের পর শনিবার দুপুরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করার পাশাপাশি থানায় মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে।