ভোলা প্রতিনিধি
ভোলায় কলেজ পড়ুয়া ছেলে রনির সঙ্গে টিকটকে পরিচয় হয় ইরিছা চং (২৩) নামের এক চীনা যুবকের। এরপর তাদের মধ্যে গড়ে উঠে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের টানে সুদূর চীন থেকে বাংলাদেশের ভোলায় এসে বন্ধুর বোনকে বিয়ে করেন ওই চীনা যুবক।গেল সোমবার (০৫ মে) রাতে ১০ লক্ষ টাকা কাবিনে চীনা এই যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামের ইলিয়াস হাওলাদারের মেয়ে নাবিয়া আক্তারের।জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে টিকটকের মাধ্যমে পরিচয় হয় নাবিয়ার বড় ভাই রনির সঙ্গে। এরপর চীনা অ্যাপস ইউচ্যাটের মাধ্যমে তাদের মধ্যে প্রায়ই কথা হতো। একপর্যায়ে গেল ১১ এপ্রিল চীন থেকে বাংলাদেশের দ্বীপ জেলা ভোলার চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামে আসেন ২৫ বছর বয়সী টগবগে চীনা এই যুবক। এক মাসের মতো বন্ধু রনির বাড়িতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে বন্ধুর ছোট বোন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাবিয়া আক্তারকে পছন্দ করে ফেলেন, দেন বিয়ের প্রস্তাবও।প্রথমে মেয়েটির পরিবার বিয়েতে রাজি না হলেও পরবর্তীতে চীনা এই যুবকের সঙ্গে বিয়ের সম্মতি প্রকাশ করেন। এরপর গেল ৫ই মে রাতে ১০ লক্ষ টাকা কাবিনে নাবিয়াকে বিয়ে করেন চীনা যুবক ইরিছা চং।ইরিছা চং নামের চীনা এই যুবক মুসলিম। চীনের লানজু শহরে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবার নাম মেছউধা। দুই ভাই এবং এক বোনের মধ্যে ইরিছা ২য়। তিনি লানজু শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন এবং নাবিয়া স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী। নাবিয়া এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ২য়।নাবিয়ার ভাই রনি জানান, প্রথমে টিকটক, পরে ইউচ্যাটের মাধ্যমে চীনা এই যুবকের সঙ্গে কথা হয় তার। এরপর তিনি বাংলাদেশে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে গেল ১১ এপ্রিল তিনি চীন থেকে বাংলাদেশে আসেন। একমাসের মতো তাদের বাড়িতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁর ছোট বোন নাবিয়াকে তিনি পছন্দ করে ফেলেন। এরপর তিনি জানান, নাবিয়াকে বিয়ে করা ছাড়া তিনি চীনে ফিরবেন না।নাবিয়ার বাবা ইলিয়াস হাওলাদার জানান, প্রথমে তাঁরা কেউই এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। পরবর্তীতে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে তাঁরা নাবিয়াকে ইরিছার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। এতে সবাই খুশি। জামাই তাদের পছন্দ হয়েছে।স্থানীয়রা জানান, ইরিছা নিয়মিত নামাজ পড়েন এবং তিনি মুসলিম। তাই বিদেশি এই যুবককে জামাই হিসেবে পেয়ে তাঁরা গর্বিত।বাংলাদেশী মেয়েকে বিয়ে করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করছেন ইরিছা চং। চীনা ভাষায় তিনি বলেন, নাবিয়া এবং তাঁর ভাইয়ের পাসপোর্টের কাগজপত্র ঠিকঠাক করা হচ্ছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি তাদেরকে নিয়ে চীনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন।এদিকে, চীনা যুবককে বিয়ে করতে পেরে খুশিতে আত্মহারা নাবিয়া আক্তার। তিনি সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, প্রথমে এই বিয়েতে কেউ রাজি না হলেও পরবর্তীতে সবার সম্মতিক্রমে তিনি এই বিয়েতে রাজি হোন। খুব দ্রুত চীনে যাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে তিনি পাসপোর্টসহ আনুষাঙ্গিক সকল কাগজপত্র ঠিকঠাক করছেন।এদিকে এই প্রথম কোন চীনা যুবক ভোলায় এসে বিয়ে করলেন। এমন খবরে এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। দূর-দূরান্ত থেকে চীনা এই যুবককে এক নজর দেখতে ভীড় করছেন হাজারো মানুষ। ওই এলাকা জুড়ে এখন সকল বয়সী মানুষের মুখে মুখে ইরিছা চংয়ের নাম।এ বিষয়ে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাইন পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, চীনা যুবক ভোলায় এসে বিয়ে করেছেন, এমন তথ্য পুলিশকে কেউ অবগত করেননি।