জনপ্রিয়

ইসলাম শান্তির ধর্ম, কিন্তু ইসলামিক দেশগুলোতেই কেন শান্তিহীনতা

প্রকাশক: Dainik Jagroto Matrivumi
প্রকাশ: 9 hours ago

কর্মীভূমিকা”ইসলাম মানেই শান্তি”—এই ধারণাটি ধর্মতাত্ত্বিকভাবে সঠিক। তবে বাস্তবতায় ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে শান্তির অভাবের কারণ হিসেবে ইসলামের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যর্থ প্রচার বা চর্চাসহ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলী জড়িত। নিচে কিছু গবেষণালব্ধ কারণ তুলে ধরা হলো—১. ইসলাম এবং ইসলামিক দেশ এক জিনিস নয়ইসলামের মূল শিক্ষা হলো শান্তি, ন্যায়বিচার, সহনশীলতা, এবং মানবিকতা। তবে ইসলামিক দেশগুলোর বাস্তবতা অনেকাংশে ভিন্ন হতে দেখা যায়। কারণ দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে মানুষ সময় বদলানোর সাথে সাথে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো নির্ধারণ করে। এসবের ওপর ভিত্তি করেই সেই দেশের শান্তি বা অশান্তির অবস্থান বিরাজমান।২. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও স্বৈরশাসনঅনেক ইসলামিক দেশ একনায়কতন্ত্র বা অগণতান্ত্রিক শাসনে পরিচালিত। সেখানে জনগণের মতামত মূল্যহীন। রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াই এবং স্বৈরশাসনের কারণে জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, যা অশান্তির অন্যতম কারণ। আবার গণতান্ত্রিক দেশেও নানান কারণে শান্তিহীনতা লক্ষ্যনীয়।৩. যুদ্ধ ও বিদেশি হস্তক্ষেপমধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সামরিক আগ্রাসন এবং যুদ্ধের কারণে অশান্ত। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইয়েমেনের মতো দেশগুলোতে যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ শান্তিকে ব্যাহত করেছে।৪. চরমপন্থা ও ভুল ব্যাখ্যাইসলামের নামে কিছু গোষ্ঠী সহিংসতা ছড়ায় যা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা নয়। কিছু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসলামকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে, যা প্রকৃত শান্তির পথে বাঁধা।৫. অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থাদারিদ্র্য, দুর্নীতি এবং শিক্ষার অভাব অনেক ইসলামিক দেশে সমস্যা তৈরি করেছে। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলো (যেমন: সুইডেন, কানাডা, জার্মানি) শান্তি সূচকে এগিয়ে কারণ তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পেরেছে।তাহলে কি “ইসলাম মানেই শান্তি”—এটি ভুল ধারণা?না, এটি ভুল নয়! ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ইসলামিক দেশগুলোর বর্তমান অবস্থান ধর্মের অপব্যাখ্যা তথা অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণেই পিছিয়ে আছে।বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে—সাধারণ মানুষের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ধর্মীয় লেবাসে ভয়ংকর লোভী ব্যক্তিদের ধর্ম ও মাজার ব্যবসা, ভণ্ড ও ক্ষমতাধর পীর, ভুয়া আলেম-ওলামাদের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ও দৌরাত্ম্যে বিভিন্ন ইসলামিক দেশগুলোর শান্তি যুগে যুগে ভুলুণ্ঠিত হয়েই চলেছে।অন্ধবিশ্বাস ও বাস্তবতাসকল ঘটনার বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, শান্তিকামি সাধারণ জনতা অশান্তির রাজ্যে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সেই ভণ্ড-লেবাসধারীদের খুশি করতেই জীবন বিলাতে প্রস্তুত। তারা আল্লাহ ও রাসুলের সহজ কথা সঠিকভাবে না খুঁজে বা না বুঝে এই ভুয়া বা লেবাসধারীদের বানোয়াট বক্তব্য নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতেই মহাব্যস্ত। এমনকি তাদের বিশ্বাসের বিপরীতে যেকোনো প্রকার কথা শুনতে বা মানতে নারাজ! উপরন্তু তারা সেই পূজনীয় ভণ্ডদের ব্যাপারে বিপরীত বক্তব্যকারীর বিরুদ্ধে জটিল ও শক্তিশালী বিদ্রোহ ঘটিয়ে তাদের সমূলে দমন করে গর্বিত হয়ে মহত্বের দাবী করে থাকেন।আজীবন এমন অন্ধবিশ্বাসী ব্যক্তিরা বাস্তবেই চরম অশান্তি ও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েই থাকেন, যা কিনা মুখ ফুটেও বলতে পারেন না। তবে অসহনীয় হলেও সইতে পারেন বটে। বাস্তবতায় দেখা গেছে, অন্ধবিশ্বাস কখনোই শান্তি আনতে পারে না।উপসংহারমূলকথা, শান্তি নির্ভর করে শাসনব্যবস্থা, ন্যায়বিচার, শিক্ষা, অর্থনীতি এবং নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করার ওপর। তবে এগুলো সঠিক সত্যের বাস্তবায়ন ছাড়া একেবারেই অসম্ভব। সকল ক্ষেত্রেই ইসলাম যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং তার শিক্ষা বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে ইসলামিক দেশগুলোরও শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।সেইসাথে লেবাসধারী ও স্বার্থান্বেষী তথাকথিত ধর্মপ্রচারকের প্রতি অন্ধবিশ্বাস দ্রুত ভেঙে ফেলতে হবে। অন্যথায় ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, তা শুধুমাত্র স্বপ্ন, কথা ও লিখনীতেই রয়ে যাবে—বাস্তবতায় শান্তির দেখা মিলবে না!

  • ইসলাম শান্তির ধর্ম
  • কিন্তু ইসলামিক দেশগুলোতেই কেন শান্তিহীনতা?