মোঃ হাবিব, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার যাদুরানি বাজারের কুমার পুকুর এলাকায় সড়কের পাশে অন্যের জমিতে খর, চাটাই, প্লাস্টিক আর বাঁশের তৈরি ছাউনিতে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বসবাস জরিনার।
ছাউনির এক পাশে গবাদি পশু। অন্য পাশে শয্যাশায়ী বাকশক্তিহীন ষাটোর্ধ্ব স্বামী নুরুল ইসলাম, মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে। তাদের নিয়ে মেঝেতে দিবারাত্রি কাটে জরিনার।
৫০ বছর বয়সী এ নারীর দাবি, তিনি কয়েকবার ঘরের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেও পাননি। একটি ঘরের জন্য খেয়ে না খেয়ে অন্যের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে জমানো টাকা স্থানীয় লোকজনকে দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যকেও ঘরের কথা বলেছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এদিকে জমির মালিক বারবার জমি খালি করার তাগিদ দিলেও নিরুপায় জরিনাকে সেখানেই থাকতে হচ্ছে।
টেকসই ঘরহীন এ নারী বলেন, ‘আমার মেয়েটা মারা যাবার পরে অসহায় হয়ে গেছি। ছেলেটা পাগল আর স্বামী শয্যাশায়ী। কথা বলতে পারে না।
‘আমাদের দেখার মতো কেউ নেই। আমার একটা ঘর দরকার।’
কথাগুলো বলেই ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন জরিনা।
তিনি আরও বলেন, শুধু ঘর নয়, একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডও পাননি।
২০২২ সালের মার্চে হরিপুরকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করা হয়। আর ঠাকুরগাঁও জেলাকে গৃহহীন ঘোষণা করা হয় ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট।
এখন পর্যন্ত জেলার পাঁচ উপজেলায় সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন ৮ হাজার ১৮৭ জন। এর মধ্যে হরিপুর উপজেলাতে তৃতীয় ধাপে ঘর দেয়া হয় ১ হাজার ৩১৬ জনকে।
হরিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান মুকুল বলেন, ‘এখন কোনো ঘর নেই। সরকার যদি আবার ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রকল্পের এসব কাজ করে, তবে ঘরের জন্য চেষ্টা করব।’
হরিপুর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী কর্মকর্তা তথা ইউএনও রকিবুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনও ছুটিতে আছেন। তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
রকিবুল আরও জানান, ঠাকুরগাঁওকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করা হলেও যদি কোনো ব্যক্তি দুর্যোগের কারণে বা অসহায়ত্বের কারণে ঘরের জন্য আবেদন করেন, তাহলে তাকে ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
তিনি সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে ওই পরিবারকে যোগাযোগ করতে বলেছেন।