রাবি প্রতিনিধি.
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। অথচ আমাদের দেশে হাজার হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে। যারা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। দু'বেলা দুমুঠো খাবার খেতে তাদের করতে হয় অমানুষিক পরিশ্রম। বিভিন্ন দোকান, কলকারখানায় শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়। নূন্যতম শিক্ষালাভের সুযোগটুকু পর্যন্ত পায় না। অথচ তাদেরকে একটু সুযোগ-সুবিধা দিতে পারলে, পড়াশোনা বা কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে পারলে তারাই হয়ে ওঠবে ভবিষ্যত জাতির কান্ডারি। এমন ভাবনা থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাজ করতে শুরু করেছিলেন ‘সুপার কিড ইনিশিয়েটিভস’ এর প্রতিষ্ঠাতা তানজিল হাসান। তানজিল হাসান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল (বুটেক্স) থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহ থাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে মাস্টার্সও করছেন তিনি। “শিশুদের নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছে কোভিডের সময় থেকে। ইউনিসেফ, ইউনেস্কোর মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। লকডাউনে অন্য কোনো কাজ না থাকায় এসব পড়াশোনা, রিসার্চ করতে গিয়ে মনে হয়েছে আমারও এই সেক্টরে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। ছোট পরিসরে হলেও এখানে আমি কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারবো।” এভাবেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কথা জানাচ্ছিলেন তানজিল হাসান। সুপার কিড ইনিশিয়েটিভসের যাত্রা ২০২২ সালে শুরু হলেও শিশুদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা অনেক আগে থেকেই ছিলো তানজিল হাসানের। ২০১২ সালে ঢাকার উত্তরাতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ‘উন্মেষ পাঠশালা’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সাল থেকেই সোখানে কাজ করছেন তিনি। শিশুদের সাথে মেশা, তাদের ফ্রি ক্লাস নেওয়া, তাদের সাথে একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হওয়া সবটার শুরু তখন থেকেই। তানজিলের মতে, একটা বাচ্চাকে সুপার কিড বা আলোকিত মানুষে রুপান্তর করতে পারলে পৃথিবীতে আর কোনো সমস্যাই থাকবে না। কারণ পৃথিবীর সবাই হবে আলোকিত মানুষ। যাদের সহানুভূতি আছে, অন্যের কষ্ট বুঝতে পারে, অন্যকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায়। কেউ স্বার্থপর না। এরকম একটা সমাজ গড়ে তুলতে আমাদের শিশুদের থেকেই শুরু করতে হবে। ‘সুপার কিড ইনিশিয়েটিভস’ বর্তমানে উন্মেষ পাঠশালার স্ট্রেটিজিক পার্টনার হিসেবে কাজ করছে।সবসময় বাচ্চাদের দেখাশোনা করা, তাদের কারিকুলাম তৈরি করা, কখন কোন বই পড়বে, কিভাবে পড়বে ইত্যাদি সকল বিষয়ই দেখাশোনা করে প্রতিষ্ঠানটি। ‘হাউ টিচার্স ক্যান ক্রিয়েট এ মেন্টাল হেলথ ফ্রেন্ডলি স্কুল’ নামে একটি প্রজেক্ট শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে ৩টি স্কুল ও ২টি ক্লাব মিলে একটা সেমিনারের আয়োজন করে। এখানে মূলত স্কুল শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেছে। এই সেমিনারে একজন মনোবিজ্ঞানী একটা স্কুলকে কিভাবে মেন্টাল হেলথ ফ্রেন্ডলি করা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এই সেমিনারটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্কুলে করা হয়। সম্প্রতি ‘আর্ট ক্রিয়েটস হোপ’ নামে বড় একটি উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এটি মূলত প্রিভিলেজড শিশুদের সাথে ননপ্রিভিলেজড শিশুদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। এখানে প্রিভিলেজড শিশুরা তাদের আঁকা ছবি প্রতিষ্ঠানটিতে ডোনেট করে। এসব ডোনেট করা ৮৫ টা ছবি নিয়ে একটি এক্সিবিশনের আয়োজন করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি। এই এক্সিবিশনের ছবি বিক্রির টাকা দিয়ে ৯৬ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে এক বছরের শিক্ষা উপকরণ কিনে দিতে পেরেছিলো সুপার কিড ইনিশিয়েটিভস। প্রতিষ্ঠানটির আরও একটি প্রজেক্ট হলো শিশু শ্রমিকদের কিভাবে শিশু শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলা যায়। প্রতিষ্ঠানটির ভাবনা হলো এসব শিশু শ্রমিকদের যদি ছয় মাস বা একবছরের একটা শিল্প ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া যায় কিনা। তাহলে শিশুদের সামনে কাজ করার অপশন তৈরি হবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তা তানজিল। তানজিল হাসান বলেন, “যে স্কুলগুলোতে কোনো আর্ট টিচার নেই সেসব স্কুলে আমরা আর্ট টিচার দিতে চাই। শিশুদেরকে নান্দনিক শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে একটা শিল্প মন গড়ে তুলতে চাই। আমি মনে করি, যার মধ্যে একটা শিল্প মন আছে সে কখনে গাছের পাতা ছিঁড়তে পারবে না, রাস্তায় ময়লা ফেলতে পারবে না। এককথায় শিশুদের মধ্যে শিল্প চর্চার মাধ্যমে শিল্প মন তৈরি করে দিতে চাই।”
তারিফুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়