মোহাম্মদ শেখ ফরিদ, স্টাফ রিপোর্টার
শীতকাল বাঙালির জীবনে শুধু ঠান্ডার ঋতু নয়, এটি পিঠাপুলির ঋতু হিসেবেও পরিচিত। শীতের সকালে খেজুরের রসের সঙ্গে গরম পিঠার সুরভি যেন পুরো বাংলার আকাশে উৎসবের আমেজ এনে দেয়। এই সময় গ্রাম থেকে শহরে, বাড়ি বাড়ি পিঠা তৈরির এক উৎসব শুরু হয়।
পিঠার ঐতিহ্য
পিঠাপুলি বাঙালি সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে শীতকালে নতুন ধান থেকে তৈরি চালের গুঁড়ো দিয়ে নানা রকম পিঠা তৈরি করা হয়। বাঙালির এই পিঠার ইতিহাস বহু প্রাচীন। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় নবান্নের সময় ধান কাটার আনন্দের সঙ্গে পিঠা তৈরির ঐতিহ্য জড়িত।
বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি
শীতকালে তৈরি পিঠার বৈচিত্র্য সত্যিই বিস্ময়কর। প্রতিটি পিঠায় লুকিয়ে থাকে স্বাদ ও সৌন্দর্যের এক আলাদা গল্প।
ভাপা পিঠা: চালের গুঁড়ো, নারকেল, আর গুড়ের মিশ্রণে তৈরি হয় এই পিঠা। গরম ভাপে তৈরি হওয়ায় এটি অত্যন্ত নরম ও সুস্বাদু।
চিতই পিঠা: ভাপা পিঠারই আরেক রূপ এটি। গরম তাওয়ায় পানি দিয়ে ভাপিয়ে চিতই পিঠা তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে খেজুরের রস মিশিয়ে খাওয়ার স্বাদ অতুলনীয়।
পাটিসাপটা: ময়দা ও দুধের মিশ্রণে তৈরি পাতলা লেয়ারের মধ্যে নারকেল ও গুড়ের পুর ভরে রোল আকারে তৈরি হয়।
দুধ চিতই চিতই পিঠা: দুধ, চিনি ও খেজুরের রসে ভিজিয়ে দুধ চিতই তৈরি হয়, যা শীতের রাতে খেতে খুবই মজাদার।
নারকেল পুলি: মিষ্টি নারকেলের পুর দিয়ে বানানো ছোট ছোট পুলির মতো দেখতে পিঠা। এগুলি সাধারণত ভাজার পর পরিবেশন করা হয়।
খেজুরের রসের গুরুত্ব
শীতের পিঠাপুলি তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান হলো খেজুরের রস। এটি শুধু পিঠার স্বাদ বাড়ায় না, বাঙালির শীতকালীন ঐতিহ্যের একটি প্রতীকও। সকালে গাছ থেকে টাটকা খেজুরের রস সংগ্রহ করা এবং পিঠার সঙ্গে সেটি পরিবেশন করার আনন্দ আলাদা।
আধুনিক যুগে পিঠার স্থান
শহরের ব্যস্ত জীবনে এখন আর গ্রামীণ পরিবেশে পিঠা তৈরির সুযোগ হয় না। তবে শীত এলে অনেক বাড়িতেই পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন পিঠা মেলা, রেস্তোরাঁ এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও শীতের পিঠা পাওয়া যায়।
শীতের পিঠার উৎসব
পিঠাপুলি কেবল খাবার নয়, এটি বাঙালির জীবনে একটি আবেগের নাম। শীতের সকালে পিঠার গন্ধ, পরিবারের সঙ্গে আড্ডা, আর মিষ্টি খেজুরের রস - সব মিলিয়ে এটি বাঙালির সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ।
পিঠার মিষ্টি স্বাদ শুধু জিভে নয়, হৃদয়েও অনুভূত হয়। তাই শীত এলেই বাঙালির মনে জেগে ওঠে পিঠার স্মৃতি এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য।