আকাশ দাশ সৈকত
প্রিয় মানুষের হাতে খুন তা আবার খুব পরিকল্পনা শেষে! আমাদের সবার জীবনে প্রেম আসে সবার একজন প্রিয় মানুষ থাকতে পারে, তবে সেই প্রিয় মানুষের ক্ষতি নিশ্চিয় আপনি চাইতে পারেন না, হয়তো কষ্ট পেয়ে নিজেকে সরিয়ে নিতে চান, নাহয় ভুল একটা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চান সহজে, তারপর ও তো বিশ্চেদ নামক যন্ত্রণার এই কষ্ট নিয়ে হাসিখুশি ভাবে ভালো থাকা যায়? কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন নিজেকে ভালো রাখতে প্রিয় মানুষটাকে খুন করে ফেলতে? কিংবা তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে অনেক পরিকল্পনা করে ফেলার মতো ঘটনা ঘটাতে....?
প্রেম করলে বিশ্চেদ নিশ্চিত! কারণ এই শহরে সবাই নিজের পছন্দের মানুষকে পায় না, পরিবার সমাজ কিংবা জাতিগত বৈষম্যের জন্য নিজের প্রিয় মানুষটাকে অনেক সময় আমাদের হারিয়ে ফেলতে হয়! কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন সম্পর্ক থাকা অবস্থায় ভালোবাসার জালে বিষ বুনে প্রিয় মানুষটার জীবন নষ্ট করে দেওয়ার মতো কাহিনী? হয়তো শুনেন নি! তবে সম্প্রতি এক অনুসন্ধানী গল্পে উঠে এসেছে এমন লোমহর্ষক হত্যার কাহিনীর কথা..যেখানে লোভে পড়ে প্রিয় মানুষটাকে ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলো গ্রীসমা নামে ভারতের তামিলনাড়ুর চব্বিশ বছরের এক তরুণী.....
অল্প দেখাতে যে কাউকে সহজে পছন্দ হয়ে যেতে পারে, অল্প দিনের পরিচয়ে কাউকে ভালোবাসা যায়, শ্যারন ও ঠিক একই পথে পা বাড়িয়েছিলেন মাত্র অল্পদিনের পরিচয়ে ভালো বন্ধু থেকে গ্রীসমা এর সাথে মন দেওয়া নেওয়া শুরু। সারা রাতভর চ্যাটিং আর মোবাইলে কথা বলে ভালোই সময় পার করছিলেন দুইজনে। তবে গ্রীসমার এই ভালো মানুষ আর হাসিখুশি চেহারার পিছনে যে লুকিয়ে আছে ভিন্ন একটা চেহারা সেইটা কি শ্যারন জানতো? এরই মাঝে হঠাত করে গ্রীসমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় । বড়লোক স্বামী আর অর্থের লোভে পড়ে গ্রীসমা বিয়েতে রাজিও হয়ে যায়, আর এইদিকে দিনের পর দিন শ্যরনের সাথে প্রেমের নাটক করে যায় সে, শ্যারন বুঝতে পারে না! তবে গ্রীসমা ঠিকই সব বুঝে শ্যারনকে পথের কাটা ভেবে ঠিকই মেরে ফেলার পরিকল্পনায় ব্যস্ত হতে থাকে! কখনো বিষাক্ত ওষুধ খাইয়ে কিংবা কখনো ফলের রসের সাথে মৃত্যু বডি মিশিয়ে শ্যারনকে মারার চেষ্টা করে গ্রীসমা তবে প্রতিবারই ভাগ্যের কারণে বেঁচে যায় শ্যারন....
গল্প হলেও সত্যি এমন কঠিণ এক লোমহর্ষক ঘটনায় অবশেষে সফল হয় গ্রীসমা। বাড়িতে কেউ নেই বলে আসতে বলে শ্যারনকে যে ওষুধ খাইয়েছে সেখান থেকে আর তার ফিরে আসার কথা না শ্যারনের। সেইদিন গ্রীসমাদের বাড়ির সবাই মন্দিরে গিয়েছিলো পুজা দিতে আর এই সময় শ্যারনকে নিজেদের বাড়িতে আসতে বলেন গ্রীসমা। আর ফাঁকা বাড়ি পেয়ে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়ায় দুইজন। কিন্তু ওই সময় গ্রীসমা শ্যারনকে যৌন উত্তেজনার ওষুধ বলে যে ওষুধ খাইয়েছিলো সেটা ছিলো পোকা মাকড় দমন করা বিষাক্ত প্যারকোয়াইড। আর নিষিদ্ধ এই রাসায়নিকের কয়েক ফোঁটা মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে। তবে গ্রীসমা শ্যারনকে যেটি দিয়েছিলো সেইখানে ছিলো কয়েক চামচ মিশানো প্যারাকোয়াইড। এইবার ভাবুন! কি হতে পারে শ্যারনের সাথে, আর সেইটা খেয়ে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি হয় শ্যারন। আর সেখানে একটা সুস্থ সবল ছেলে হাসপাতালের বেডে ছটপট শুরু করে দেয় । হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তাররা কিছু বলতে পারে না ঠিক কি কারণে এমনটা হয়েছে, প্রিয় মানুষের কথা ভেবে শ্যারন ও সত্যিটা কখনো প্রকাশ করেনি।
হাসপাতালে এমন ছটপট আর নিজের সাথে যুদ্ধ করার পর ও গ্রীসমার মন গলে নি, সবাই যখন জিজ্ঞাসা করে ঠিক কি কারণে এমনটা হয়েছে গ্রীসমা তখন ও জানায়নি কিছু। অবশেষে সেই ঔষুধের প্রক্রিয়ায় হাসপাতালের বেডে ৫-৬ দিন যুদ্ধ করার পর শ্যারনের শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যাঙ্গ পঁচে যায় এবং সেইখানে তার মৃত্যু হয়। এমনভাবে শ্যারনকে মারার পর ও একটিবারের জন্য হলেও গ্রীসমাকে অপরাধীর হিসেবে পুলিশের কাছে বললেননি। নিজের প্রিয় মানুষটি এতবড় হত্যার প্ল্যান করার পর ও বাঁচিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো.....! তাইতো বলা হয় ম্যানস লাভ ইস ট্যারিডল! পুরুষের ভালোবাসা ভয়ঙ্কর!
তবে শ্যারন বাঁচিয়ে দিয়ে গেলেও নিজে কি বাঁচতে পেরেছে গ্রীসমা? এমন জগন্য কাজের পর ও কি সে সুখে থাকতে পারবে বলে হয় ? তবে পারেনি সে এর কিছুদিন পর কেরালা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় তিনি! কিন্তু পরের বছরই জামিন মঞ্জুর হয় তার তবে কেইসটা পুলিশ মানতে না পেরে পার্সোনালি নিয়ে নেয় এবং সেইখান থেক গত ২০শে জানুয়ারী কেরালার সবচেয়ে কম বয়সী মহিলা হিসেবে মৃত্যুদন্ডের সাজা পান ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী।
ভালোবাসা সুন্দর! তবে ভালোবাসলে সঠিক মানুষকে ভালাবাসুন। না হলে এই গ্রীসমার মতো আরো কতো গ্রীসমা ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের আশেপাশে সেই তথ্য কিন্তু নিচক কম নয়...!
[তথ্যসূত্রঃ দ্যা মিনিট, হিন্দুস্থান টাইমস, দ্যা হিন্দু, ইন্ডিয়ান টাইমস, আনন্দবাজার।]