আন্তর্জাতিক ডেস্ক.
তীব্র হচ্ছে মণিপুরে চলা জাতিগত সংঘাত। মায়ানমারের গৃহযুদ্ধে লড়াই করে সীমান্ত পেরিয়ে মণিপুরে ফিরছেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা। তাদের এমন প্রত্যাবর্তনে রাজ্যের চলমান সংঘাত আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। এমনই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়েটার্স।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে উত্তাল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্য। বিগত কয়েক মাস রাজ্যটি সাময়িকভাবে শান্ত থাকলেও সহিংস সংঘর্ষের জেড়ে সম্প্রতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাজ্যটিতে ১৯ মাস ধরে চলা এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৬০ জন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৬০০০০ এর বেশি মানুষ।
মোদি সরকারের ১১ বছরের শাসন আমলের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত বলে উঠে এসেছে রয়েটারস এর প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় হিন্দু মেটে এবং খ্রিস্টান কুকি আদিবাসীদের মধ্যে জাতিগত এই সংঘাত মোদি শাসন আমলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সবচেয়ে করুণ পরাজয়ের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে মণিপুরে চলা এমন পরিস্থিতির মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ভারতের মণিপুরে নিয়োজিত গোয়েন্দারা। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে ভারতের মণিপুর রাজ্যে প্রবেশ করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রশিক্ষিত সশস্ত্র সদস্যরা। ফলে রাজ্যটির জাতিগত সংখ্যা আরো তীব্র হচ্ছে। ভারতীয় সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাদ দিয়ে রয়েটারস জানিয়েছে মায়ানমার থেকে এসব সশস্ত্র যোদ্ধাদের রাজ্যটিতে প্রবেশের পর এই সংঘাত নতুন মাত্রা নিয়েছে। এমনকি নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে এই সংঘাত। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের সজ্জিত এসব যোদ্ধাদের কাছে রকেট, লঞ্চারও মজুদ রয়েছে। গত নভেম্বরে ২০ জন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় সরকার ১০০০০ অতিরিক্ত সৈন্য ও ৩০০০০ পুলিশ মোতায়ন করেছে। বর্তমানে মণিপুরে মোতায়নকৃত সৈন্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭০০০।
প্রতিবেদন উঠে এসেছে মায়ানমার থেকে ফিরে আসা এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন সংঘাত চলাকালে অনেক অস্ত্র রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লুট করা হয়েছে। এমনকি মায়ানমার থেকেও আনা হচ্ছে অস্ত্র। মণিপুর রাজ্যে মেইটে এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে গত বছর জাতিগত সংঘাত বাঁধে। তাদের মধ্যে দ্বন্দের সূত্রপাত হয় কোটা এবং অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে। যা পরবর্তীতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনো সেখানে উত্তেজনা প্রশমনের কোন দেখা যাচ্ছে না। এমন অস্থিরতার সুযোগে মণিপুরে অসংখ্য অনুপ্রবেশকারী প্রবেশ করছে বলে ধারণা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।