সংবাদ দাতা-মোস্তফা আল মাসুদ (দিনাজপুর প্রতিনিধি)
দিনাজপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ আবারও বিচ্ছিন্ন করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিক্রয় ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো। অন্যদিকে দিনাজপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জেনারেটর চালিয়ে সবধরনের সেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ভোরে পৌরসভার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় নেসকো। এর ফলে গত চার দিন ধরে পৌর কর্তৃপক্ষ জেনারেটর চালিয়ে জনসেবা অব্যাহত রেখেছেন।
দিনাজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাড়ে ২২ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল বলছেন, কোনো নোটিশ না দিয়েই লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অপরদিকে পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো দিনাজপুর প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলছেন, নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল। অপরদিকে নেসকো দিনাজপুর-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিদেশে থাকায় দায়িত্বে রয়েছেন দিনাজপুর-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলেন, প্রায় সাড়ে ২২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছিল, তারা প্রতি মাসের চলমান বিল পরিশোধ করবেন। কিন্তু এতেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তাই বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল বলেন, কোনো নোটিশ না দিয়েই লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমি গত ১০ অক্টোবর-২৩ ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। এ সময় নেসকো দিনাজপুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়। তাদের আমি জানিয়েছি, প্রতি মাসের চলমান বিল পরিশোধ করব। সেই কথা অনুযায়ী নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছি।
গত ৩০ জানুয়ারি আমি বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে রংপুরে মিটিংয়ে থাকায় পরদিন ৩১ জানুয়ারি সকালে জানুয়ারি মাসের বিলের চেক প্রদান করি। কিন্তু তারা কোনো নোটিশ ছাড়াই ভোরে গোপনে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করেন। এতে করে সব ধরনের সেবা যেমন জন্ম, মৃত্যু নিবন্ধন, অনলাইনে ট্রেড লাইনেন্স নবায়ন, পানির বিল প্রদানসহ ডিজিটাল সেবা এবং পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের ফ্রিজে থাকা শিশুদের বিভিন্ন প্রকার টিকার অ্যাম্পুল নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
আমি এবং আমার প্রকৌশলীরা তাদের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাতে দেখা করে জানুয়ারি মাসের বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৩১ জানুয়ারি ইস্যু করা ১১ লাখ টাকার চেকটি গ্রহণ করার জন্য বলি। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে চেকটিও গ্রহণ করছে না এবং বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হচ্ছে না।
এতে বাধ্য হয়ে জেনারেটর চালিয়ে পৌরসভায় জনসেবা সচল রেখেছি। অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে নেসকো দিনাজপুর-২ এর অফিসের জায়গার ভাড়া বাবদ ৩৩ কোটি টাকা পাবে দিনাজপুর পৌরসভা। সেটি তারা পরিশোধ করছে না। কই আমরা তো তাদের অফিস বন্ধ করে দেই নাই।
তিনি আরও বলেন, দিনাজপুর পৌরসভার কাছে সাড়ে ২২ কোটি টাকার যে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে এটি আমার দায়িত্ব গ্রহণ করার আগের। প্রায় ২৫ বছর ধরে এই বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে।
এর আগে ২০ বছরের বিল বকেয়া ছিল। ১৮-১৯ বছর আগে যখন বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল হক ছুটু মেয়র ছিলেন, সে সময় বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে পৌরসভার জায়গার ভাড়া নিয়ে বৈঠক হয়। সে সময় পৌরসভার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জায়গার ভাড়া পরিশোধ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
কিন্তু তারা এখনো সেই ভাড়া পরিশোধ করেননি। যদি বকেয়া বিদ্যুৎ বিল এবং বকেয়া জায়গার ভাড়া যোগবিয়োগ করা হয় তাহলে পৌর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে সাড়ে ১১ কোটি টাকা পাবেন।