মুহাম্মদ এরশাদুল ইসলাম
লাভজনক হওয়ায় ঝালকাঠিতে বাণিজ্যিক ভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বরইয়ের চাষ। দক্ষিণা জেলা ঝালকাঠির বিভিন্ন বাগানে চার থেকে ছয় ফুট উচ্চতার প্রতিটি গাছে গাছে ঝুলছে রসালো মিষ্টি নারিকেলী, ভারত সুন্দরী, বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি আপেলসহ ৭-৮ প্রজাতির বরই। বাগানগুলো পাকা-কাঁচা বরই থোকায় থোকায় ভরে গেছে। অনুকুল আবহাওয়ায় বরইয়ের ফলন আকার আকৃতি ও স্বাদ বেড়েছে। এবছর প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে বরইয়ের চাষ হয়েছে। প্রতিটি গাছে ৪০ থেকে ৫০ কেজি ফলনের আশা করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। স্থানীয় কয়েক জন চাষিরা বলছেন, সঠিক পরির্চযা করার কারণে এ বছর বড়ই বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে এবং প্রত্যেকটি গাছে বড়ই এর ভরে অধিকাংশ ডাল নুয়ে পড়েছে। এসব বরই স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন তার। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেও এ ফল সংগ্রহ করে থাকেন। বিশেষ করে উচু পতিত জমিতে বড়ই চাষ ভালো হয়ে থাকে। এ চাষে ঝুকি ও খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় বরই চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। চাষিরা আরো বলেন সল্পসময়ে ভালো ফলনে বেকারত্ব কমছে। অনেকাংশে নতুন করে কৃষি উদ্যোক্তা বাড়ছে। কিস্তাকাঠি এলাকার বরই চাষি মো: সুজন হাওলাদার বলেন, ৩৬ শতাংশ জমিতে বরইয়ের আবাদ করেছেন। মুলত এখানে সাত জাতের বরইয়ের চাষ হয়ে থাকে। এসব বড়ইয়ের মধ্যে রয়েছে, আপেল কুল, কাশমেরি, বল সুন্দরী দেশী নারকেলি ও নাইন্টি কুল। এর পাশাপাশি তিনি মৌসুমি সবজিও চাষ করেন। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বছর তার এই ৩৬ শতাংশের বাগান থেকে এক লাখ টাকা আয় করেন। প্রথম বছর বাগান প্রস্তুত, বরই চারা ক্রয়, মাটি কাটাসহ আন্যান্ন খরচ বাবদ প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যায় হয়েছে উল্লেখ করে বরই চাষি মো: মাসুম হাওলাদার বলেন, ওই বার লাভ কম হলেও পরের বছর থেকে এখন দ্বিগুন লাভ পাচ্ছেন। স্থানীয় বড়ই বাজারে মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ৭০ টাকা থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মনিরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, এ বছর বাণিজ্যিকভাবে জেলার প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে বরই চাষ হয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকে কমপক্ষে এক থেকে দেড় মন বরই বিক্রি করতে পারছেন কৃষক। আশা করা যায় প্রায় ১২ কোটি টাকার বরই বিক্রি করা সম্ভব হবে। প্রকৃতি অনুক‚লে থাকায় ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে সঠিক পরিচর্যা করায় ঝালকাঠিতে বরইয়ের আশানুরুপ বরইয়ের ফলন হয়েছে। খরচ কম বেশি লাভের আশায় যেমন নতুন কৃষি উদ্যোক্তার তৈরি হচ্ছে, এর পাশাপাশি সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে শত শত কর্মসংস্থানের। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক ভাবে বরই চাষে আরো কৃষক ও উদ্যোক্তারা আগ্রহী হবেন যা গ্রামীন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।