বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শ্রেণীকক্ষে নারী শিক্ষার্থীদের হিজাব-নিকাব খুলতে বাধ্য করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। এসময় দুইদিনের আল্টিমেটাম দেন তারা৷ দুই দিনের মধ্যে সুষ্ঠ বিচার না হলে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে বিভাগে তালা ঝোলানোর কথা বলেন শিক্ষার্থীরা। এদিন দুপুর ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্তাগারের সামনে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। যেখানে অনার্স ১ম বর্ষ থেকে শুরু করে মাস্টার্সে শিক্ষার্থীরাও একাত্মতা ঘোষণা করে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে এসময়, 'নিকাব নিয়ে আর নয় কটুক্তি', 'হিজাব নিকাব পর্দা আমার অহংকার, আমার গর্ব', 'বাবার পোশাকে ছোট করে দেখা ও কটাক্ষ করা শিক্ষকের থেকে বান্চনীয় নয়', 'হিজাব আমার ব্যাক্তি স্বাধীনতা', 'ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় চলবে না কোনো হস্তক্ষেপ', 'পর্দার মতো ফরজ বিধান নিয়ে কটুক্তি করার অধিকার আপনাকে কে দিল?', 'নিকাব নিয়ে হয়রানি মানছি না মানবো না', 'শিক্ষক যদি এমন হয় তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?', 'পর্দার স্বাধীনতা হরনকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই', ' মুক্তমনা চিন্তার নামে ইসলামি অনুশাসনের আঘাত মানবো না।' ইত্যাদিলেখা সহ বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে অবস্থান করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন শিক্ষকের কারণে পুরে বিশ্ববিদ্যালয় কলঙ্কিত হয়েছে। তার এই ঘটনার কারনে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে ব্যাক্তী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের বোনদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। আমাদের বোনেরা কি পেশাক পড়বেন এটা তার ইচ্ছা। তার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করার অধিকার শিক্ষকের নেই। এই স্বাধীনতার উপর যিনি হস্তক্ষেপ করেছেন তার কালো হাত গুড়িয়ে দিতে আমরা সংঘবদ্ধ হয়েছি। এসময় দুই দিনের মধ্যে সুষ্ঠ বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা হয়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের হুশিয়ারি দেন তারা। মানববন্ধনে বক্তারা বিভাগের শিক্ষকদের পাশে থাকার আহ্বান জানান। মার্স্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুর রাকিব বলেন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও এ ধরনের বিষয় নিয়ে দাড়াতে হবে তা কল্পনাও করতে পারি নি। বিভাগে আমাদের এসব শিক্ষক আছে তারা অত্যন্ত ছাত্রবান্ধব। কিন্তু 'ভুলবশত' হাফিজুর রহমানের মতো একজন শিক্ষাক আছে যার নাম উচ্চারণ করতেও কষ্ট হয়। প্রথম বর্ষ থেকেই দেখে আসছি বিভিন্ন মেয়েদের ইনবক্সে নক দেওয়া, পারসোনাল কথা বলে। এমন শতশত স্কিনশট আছে আমাদের কাছে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে মেয়েরা যখন এককভাবে এগুলোর স্বীকার হয় তখন লোকলজ্জার ভয়ে কাওলে বলতে পারে না। তারা মুখ খোলার সাহস পায় না এই ভয়ে যে তিনি একজন শিক্ষাক। তার বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিবাদ করবো। আমরা ওই শিক্ষকের এমন নিন্দনীয় কাজের প্রতিবাদ জানাই এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুস্ সানিহা বলেন, আমরা তিনদিন মাত্র ক্লাস করেছি। একদিন ক্লাসে আমি একটা ছোট কাগজ দিয়ে বাতাস করছিলাম, তখন আমাকে বলে এটা কি করছো। তখন আমি বললাম গরমের জন্য বাতাস দিচ্ছি। এটা শুনে স্যার বলেন, এটাতো খুবই দৃষ্টিকটুর। এই রকম পোশাক পরে আসলে তো গরম লাগবেই। তোমার গরম তোমার কাছে রাখো। তিনি আরও বলেন, আমার বান্ধবী মিমি সে জোড়ে প্রেজেন্ট দিয়েছে। কিন্তু স্যার বলে হয়নি, তোমার নেকাব খোল এবং আমার বান্ধবী তাহেরাকে বলেছে, এটা কেমন পোশাক? তিনি শুধু নিকাব নিয়ে কটুক্তি করেনি সাথে সাথে ইসলামী সংস্কৃতি নিয়ে কটুক্তি করেছে। আমরা যদি ইসলামিক স্টাডিজে পড়ে এমন হেনস্থায় শিকার হই, তাহলে অন্য বিভাগে যারা পড়ে তাদের সাথে কেমন হতে পারে? তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? বিভাগের শিক্ষার্থী মাহায়ের ইসলাম বলেন, দেশের সর্বচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করে একটা মানুষ কিভাবে তার অধিকারের প্রশ্নে সোচ্চার হবে, একটা ছাত্রী বা নারী কিভাবে তার অধিকারগুলো খুঁজে পাবে, একটা নারী কিভাবে বুলিং ও হ্যারাজমেন্ট কে মোকাবিলা করবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব শিখে থাকি। শিক্ষক আমাদের এগুলো শিক্ষা দেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে মত বিদ্যাপীঠে যখন শিক্ষকের নামে একজন কুলাঙ্গার প্রবেশ করে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন বা মূল লক্ষ্য সেখান থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু আজ আমরা কি দেখতে পাচ্ছি। যারা আমাদের বোনদের অধিকারের শিক্ষা দিবে, বুলিং হ্যারাজমেন্ট থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় সেই শিক্ষা দিবে সেই শিক্ষকের থেকে ছাত্রীরা হ্যারাজমেন্ট, বুলিংয়ের স্বীকার, যৌন নিপীড়নের স্বীকার হয় তখন আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা রেখে ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত রেখে আমরা রাজপথে দাঁড়াতে বাঁধ্য হই। এই মানববন্ধনে আমরা ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
তারিফুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়