নিজস্ব প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগে বিগত ২৩/০৪/২০২৪ তারিখ বিগত ভিসি জনাব এএসএম মাকসুদ কামালের সময়ে শিক্ষক নিয়োগ সার্কুলারে ভিত্তিতে গত ০২/০৬/২০২৪ তারিখ মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব থেকেই নিয়োগ সংক্রান্ত পক্ষপাত ও দুর্নীতির গুঞ্জন শোনা যায় এবং পরবর্তী সময়ে তার বাস্তবতা পাওয়া গেলে নিয়োগ প্রাক্রয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।
মৌখিক পরীক্ষা ‘মঞ্চস্থ’ হওয়ার পর বিভাগের আওয়ামীপন্থী সাবেক চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের এর ‘মাইম্যান’ হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিন আহমেদ এবং বর্তমান চেয়ারম্যান ড. আশফাক হোসেনের ম্যাইম্যান হাসাইবুর রহমানকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের প্রার্থী এবং সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রার্থী হিসেবে ঊম্মে সালমা যিনি বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আছেন এবং তারানা তাবাসসুম দুজনের জন্য শিক্ষক নেতা নিজামুল হক ভূইয়া জোরালো তদবির করেন। কিন্তু বোর্ডের প্রভাবশালী দুইজন শিক্ষক তাদের পছন্দের লোক নিয়োগের সুপারিশ করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এই নিয়োগপত্র সিন্ডিকেট এ উঠায়নি ইতিমধ্যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। নাম প্রকাশ করার না শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান বর্তমান প্রশাসনের সাথে আঁতাত করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা তাদের পছন্দের ক্যান্ডিডেটদের সুপারিশপত্র সিন্ডিকেট এ পাশ করানোর ব্যবস্থা করেছেন।
নিয়োগকৃত দুইজনকে ব্যাচের প্রথম স্থান অধিকারী যোগ্য ছাত্র-ছাত্রীদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব প্রকল্পে কাজ করার কারণে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মহিউদ্দিন আহমদ বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের পদধারী ছিল এবং জুলাই অভ্যুথানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। উল্লেখ্য মহিউদ্দিন প্রভাব খাটিয়ে তার বান্ধবী খুরশিদাকে গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাবস্থা করে । বর্তমান চেয়ারম্যান যিনি সাবেক ভিসি আসম আরেফিনের লোক হিসেবে পরিচিত এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ছিলেন তিনি বর্তমান প্রশাসনের সাথে নেগোসিয়েট করে তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করেন এবং তিনি প্রশাসনকে বুঝিয়েছেন যে তারা নিজামুল হকের সাথে ফাইট করে এদের নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ ঘটনা ভিন্ন তিনি যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নিজের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়েছেন। ফলাফলের দিক থেকে মহিউদ্দিন ব্যাচে তৃতীয় ছিলেন অথচ ওই ব্যাচের প্রথম স্থান অধিকারী আবু বকর স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে প্রথম ছিলেন। যিনি বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। শুধু মাত্র মাদরাসার ছাত্র হওয়ার কারণে এবং দাঁড়ি-টুপির কারনে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে হাসাইবুর রহমানের ব্যাচের প্রথম স্থান অধিকারী সোনিয়া আক্তার যিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাকেও বাদ দাওয়া হয়েছে। তাদের এই নিয়োগ নিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তুষ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগের সিনিয়র একজন অধ্যাপক বলেছেন এই নিয়োগ মূলত কোটার নিয়োগ। বিভাগকে ধ্বংস করার চক্রান্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ফ্যাস্টিস্ট আমলের বোর্ডের সুপারিশপত্র এই প্রশাসন পাশ করল। ইতিহাস বিভাগের পূর্বের নিয়োগগুলোও এরকম কোটারমত করা হত। তাহলে এই জুলাই বিপ্লব করে লাভ কি হল? বোর্ডের এই দুই প্রভাবশালী শিক্ষক বিগত আমলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নিজেদের পছন্দের লোক আঁতাত করে নিয়োগ দিত।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই নিয়োগের প্রতিবাদ করে আসছে এবং এই নিয়োগ সুপারিশ অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে পাশ করানো হয়েছে। বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকরা এই নিয়োগ পাশের সংবাদে ক্ষুব্ধ । তাদের দাবী দ্রুত এই বোর্ডের সুপারিশ বাতিল করে নতুন নিয়োগ সার্কুলার দেওয়া নচেৎ এই বিপ্লবের স্পিরিট ধ্বংস হবে।