চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের তের রশিয়া পোড়াগ্রাম ও লক্ষীনারায়ণপুর এলাকার স্থানীয় অধিপত্যে বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক দৈনিক মানব জমিন, আমার দেশ সহ নাগরিক টিভিতে মনগড়া সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১৪ জুলাই) বেলা ১১.৩০ মিনিটের সময় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যলয়ের কনফারেন্স রুমে জেলা পুলিশের আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাখেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল করিম। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, প্রায় ৮/৯ মাস পূর্বে সাংবাদিক ফারুক আহমেদ চৌধুরী ও নাসির মেম্বার তাদের অনুসারীদের নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের নতুন ব্রিজের পশ্চিমে ইটভাটার পাশে মহানন্দা নদী হতে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তলনের কাজ শুরু করে। এছাড়াও ৬/৭ মাস পূর্বে জিয়া মেম্বার উক্ত স্থানের কয়েকশত গজ দূরে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালি উত্তোলন শুরু করে। আনুমানিক ৩ মাস পর অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাংবাদিক ফারুক আহমেদ গ্রুপ কর্তৃক অবৈধভাবে মাটি খনন ও বালি উত্তোলন কাজ বন্ধ করে দেন এবং অবৈধভাবে মাটি খনন ও বালি উত্তলনের ব্যবহারকৃত vekue গাড়িটি জব্দ করে ইসলামপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার নাজিম এর দায়িত্বে রাখেন। প্রশাসনের তৎপরতা দেখে জিয়া মেম্বারও অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনের কাজ বন্ধ করে দেয়।
তার ১৫/২০ দিন পর সাংবাদিক ফারুক আহমেদ এর নেতৃত্বে তার লোকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক আটককৃত ভেকু গাড়ি জিম্মাদারকে অবহিত না করে গোপনে উক্ত স্থানে নিয়ে গিয়ে পুনরায় অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনের কাজ শুরু করে। সংবাদ পেয়ে ভেকু গাড়ির জিম্মাদার নাজিম মেম্বার বিষয়টি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে নাজিম মেম্বার মহানন্দা নদীতে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত মাটি ও ভরাট বালু'র পয়েন্টে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিক ফারুক ও তার পক্ষের লোকজনকে পুলিশ আসার খবর জানালে। উক্ত সংবাদে ভীত হয়ে সাংবাদিক ফারুক এর লোকজন পালিয়ে যাওয়ার সময় আড়াহুড়ো করার কারণে শিমুল (৩৬) নামে একজন মাটি টানা ট্রাক্টরের নিচে পড়ে গুরুতর আহত হোন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক ফারুক আহমেদ গ্রুপের শিমুল বাদি হয়ে এজাহার দায়ের করলে জিয়া মেম্বারও অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসামীরা জামিনে আসার পর সাংবাদিক ফারুকের পক্ষের মোঃ অসিম আলীকে তাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা দেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে উভয়ের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এর জের ধরে সাংবাদিক ফারুকের পক্ষের অসিমসহ ১০/১২ জন জিয়া মেম্বার এর পক্ষের জিয়া মেম্বার এর মামাতো ভাই কোরবানকে তসলিমের মোড়ে একা পেয়ে লোহার রোড দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম কতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতক সৃষ্টি করে। স্থানীয় লোকজন কোরবানকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয়া বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্ণিত ঘটনায় কোরবান বাদি হয়ে সাংবাদিক ফারুকসহ তার পক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেন।
গত ১৫ জুন তারিখ রাত্রী ১০ টার সময় জিয়া মেম্বার গ্রুপের মোঃ শহীদুল ইসলাম'কে সাংবাদিক ফারুক আহমেদ এর এলাকা তেররশিয়া পোড়াগ্রামে একা পেয়ে সাংবাদিক ফারুক আহমেদ এর নির্দেশে তার অনুসারীরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে শহিদুল ইসলামকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। শহীদুল ইসলাম এর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আসামিরা ৪টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়। এঘটনায় শহীদুল ইসলাম এর ভাই মোঃ কামরুল ইসলাম বাদি হয়ে সাংবাদিক ফারুক আহমেদ সহ এজাহারনামীয় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন এবং বর্তমানে সাংবাদিক ফারুকসহ ৫ জন আদালত হতে জামিনে আছেন। একই ঘটনায় সাংবাদিক ফারুকের পক্ষের মোঃ অসিম আলী বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে জিয়া মেম্বারসহ তার লোকজনের বিযুদ্ধে মডেল সদর থানা মামলা হয়। উক্ত মামলায় জিয়া মেম্বারের ছেলে নিশানসহ ৯৩ জন জামিনে আছে।
সাংবাদিক ফারুক জামিন নিয়ে তার পক্ষের লোকজনদের সংগঠিত করে গত ১০ জুলাই রাত ৮ টার সময় জিয়া মেম্বার পক্ষের শহিদুল ও তার ভাই কামরুলকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বলে এবং মামলা না তুলে নিলে তাদের মারধর করাসহ বসতবাড়ি ভাংচুর করা হবে বলে হুমকি প্রদান করে এলাকায় ত্রাস ও আতংক সৃষ্টির লক্ষ্যে শহিদুল ইসলাম এর বাড়ির পাশে ৫ টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।
১১ জুলাই সকাল আনুমানিক ৬:৩০ মিনিটের সময় সাংবাদিক ফারুক এর গ্রুপের ৩৫/৪০ জন জিয়া মেম্বার গ্রুপের ২৭টি বসতবাড়িতে হামলা করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। জিয়া গ্রুপের লোকজনও পালটা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। উভয় পক্ষ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতংক ও ত্রাস সৃষ্টি করে। সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক সদর মডেল থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। উক্ত ঘটনায় জিয়া মেম্বার গ্রুপের মোঃ সামিরুল ইসলাম বাদি হয়ে সাংবাদিক ফারুক আহমেদসহ এজাহারনামীয় ২২ জনসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে সদর মডেল থানার মামলা হয় অপরদিকে একই ঘটনায় মোঃ অসিম আলী বাদি হয়ে এজাহার দায়ের করলে জিয়া মেম্বারসহ এজাহারনামীয় ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। উক্ত ঘটনার পর থেকে সাংবাদিক ফারুক এবং জিয়া মেম্বার গ্রুপের ত্রাস সৃষ্টিকারীরা পলাতক রয়েছে।
সাংবাদিক ফারুক আহমেদ এর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হওয়ার পর পুলিশ তার বিরুদ্ধে কেন মামলা রুজু করলো সে কারণে পুলিশের প্রতি এবং প্রতিপক্ষের প্রতি তিনি ক্ষুদ্ধ হয়। উক্ত মামলায় সাংবাদিক ফারুক জামিনে থেকে এলাকায় একক অধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিপক্ষের উপর প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে প্রতিনিয়ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করছেন। অপরদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত তথ্য সংযোজন করে সংবাদ প্রচার করে আলোড়ন সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করছেন। এই বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত মিথ্যা তথ্য প্রচারে সাংবাদিক ফারুক আহমেদকে তার ঘনিষ্ঠ কোন কোন সাংবাদিক সহায়তা করছেন। সাংবাদিক ফারুক আহমেদ এর বিযুদ্ধে ৫ টি মামলা তদন্তাধীন/বিচারাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
সাংবাদিক ফারুক আহমেদ এর গ্রুপে একাধিক আওয়ামীলীগ এর স্থানীয় নেতা-কর্মী আছে। তাদের নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরী করে এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক ও ত্রাস সৃষ্টি করছেন। অপরদিকে প্রতিপক্ষকে আওয়ামীলীগ ট্যাগ নিয়ে পুলিশকে চাপে রাখতে এবং ব্যবহার করতে সাংবাদিক ফারুক চেষ্টা করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলাধীন ইসলামপুর ইউনিয়নের ঘটনাটি নিয়ে ২/১ টি সংবাদ মাধ্যমে নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের তান্ডব নিয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেটি সত্য নয়।
ইসলামপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ওয়ার্ড মেম্বার জিয়ার সাথে সাংবাদিক ফারুকের পরিবারের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রীক ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বিরোধ রয়েছে। উক্ত বিরোধের কারণে বিভিন্ন সময় সংঘর্সএঐ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
সাংবাদিক ফারুক ও জিয়া মেম্বার গ্রুপের উভয়ের মধ্যেই বিএনপি ও আওয়ামীলীগের কর্মী-সমর্থক রয়েছে। এটি কোন রাজনৈতিক সংঘাত বা সরকার বিরোধী অপচেষ্টা নয়। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে আধিপত্য কেন্দ্রীক সংঘর্ষ হয় নাই। এটি উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পূর্ণ স্থানীয় অধিপত্যে বিস্তারকে কেন্দ্র করে ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হয়েছে।