শাকিল আহমেদ (চৌহালী প্রতিনিধি): প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে চৌহালীর মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষ বিদ্যুতের সেবা থেকে বঞ্চিত। দিনে সূর্যের তেজ আর রাতে ভ্যাপসা গরমে অসহনীয় অবস্থায় সময় পার করছে মানুষ। প্রচন্ড গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে খেটে খাওয়া মানুষের শান্তি নেই। ভাল নেই বোরো আবাদকারি কৃষক ও শিক্ষার্থীরা। গত সপ্তাহ জুড়ে চলছে টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন নাগরপুর জোনাল অফিসের আওতায় ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে । মানুষের সঙ্গে প্রাণিকূলের অবস্থাও ওষ্ঠাগত। জমিন শীতল হতে প্রকৃতির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রাণীকূল। আসন্ন ঈদুল ফিতরে বেশি বিপাকে পড়েছেন সকল ধরনের ব্যবসায়ীরা। সরকারি দপ্তর হাসপাতাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এনজিও শপিংমল সেবা ও কল কারখানায় উৎপাদন ও ব্যাহত হচ্ছে। প্রচন্ড দাবদাহ আর দিনের বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদন ও বেচা-বিক্রি ব্যাহত হচ্ছে। সকাল ৭টার পর থেকে সূর্যের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। দুপুরে তীব্রতা আরও বেশি। সেহরি, ইফতার, তারাবি নামাজে রোজাদারের জন্য কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রচণ্ড এ গরমে সবচেয়ে বিপদে আছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। রোদে তাকালেই চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। টানা গরম আর অনাবৃষ্টিতে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। গরম বাতাস শরীরে লাগছে আগুনের হলকার মতো। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। ঠিক এমন বৈরী পরিস্থিতিতে মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে ঘন ঘন লোডশেডিং। লোডশেডিং হলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবার মতো অবস্থা। টাংগাইল ও নাগরপুর শহরের তুলনায় চৌহালীর গ্রামগুলোতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় উপজেলাজুড়ে বারবার লোডশেডিং চলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নাগরপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস। গতকাল বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার দিনে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ বার লোডশেডিং হয়। ২০২৪ সালে পল্লি বিদ্যুৎ নামাজ ও রোজাকে হার মানিয়েছে। চৌহালীতে পল্লী বিদ্যুৎ অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলমকে জটিল সমস্যা সহ দরকারি কোনো বিষয় নিয়ে বার বার কল দিলে রিসিভ করা হয় না বলে জানান ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, নাগরপুর পশ্চিম অঞ্চল চৌহালী উপজেলায় কোদালিয়া অভিযোগ কেন্দ্রের আওতাধীন ৪টি ইউনিয়নসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে পল্লী বিদ্যুৎ। নাগরপুর জোনাল অফিসের আওতাধীন অগণিত বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত কয়েকদিন যাবত ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। ভয়াবহ এই লোডশেডিংয়ে উৎপাদন ব্যাহত ও অফিস কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া এই গরমে শিশুরা সর্দি-কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পল্লীবিদ্যুৎ নাগরপুর জোন অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রচণ্ড দাবদাহে সারাদেশে লোড বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সর্বোচ্চ লোড চলছে প্রায় ২ মেগাওয়াট, দরকার ৪ মেগাওয়াট। নাগরপুর ও গুনি পড়া ফিটার আওতায় চৌহালীতে ২০ থেকে ২২ হাজার কনজুমার গ্রাহক রয়েছেন। বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী মেগাওয়াট কম। তবে আবহাওয়া ঠান্ডা ও বৃষ্টি হলে লোডশেডিং অনেকটাই কমে যাবে। মাহে রমজানে সেহরি, ইফতার ও তারাবি নামাজ আদায় নিয়ে উৎকণ্ঠায় ইমাম ও মুসল্লীরা। লোডশেডিং এর কবলে পরায় মোমবাতি ও হারিকেন এর কদর বেড়েছে। সামনে ঈদ কে সামনে রেখে চোখে অন্ধকার দেখছি। বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ রক্ষা করেও কোন সুফল পাইনি। স্মার্ট যুগে এ মরণ ব্যধি থেকে কবে পরিত্রান পাবো। জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নয়ন মনি জানান , প্রচন্ড দাবদাহে বাসায় থাকা যায় না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ । কুরকী গ্রামের রুবেল রানা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা বিপাকে পড়েছি। জোতপাড়া বাজারের কম্পিউটার ব্যবসায়ী জিন্নাহ মোল্লা বলেন , বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোক গুলো লোডশেডিংয়ের কারণে সময় নষ্ট হচ্ছে ও কাজের ব্যাগাৎ ঘটছে। মো ফারুক সরকার-উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, উপজেলার বিদ্যুৎ আওতাধীন এলাকাতে প্রতিদিন ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিবার এক থেকে দেড় ঘন্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে পরিষদ সহ সরকারি দপ্তরে দাপ্তরিক কাজ জিমিয়ে পরেছে এবং হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম ব্যাহৎ হচ্ছে।