প্রতিবেদক: মো: শোয়েব হোসেন (সংগীত শিক্ষক, মিউজিক ও সাউন্ড থেরাপি গবেষক,বিশ্লেষক, চিন্তাবিদ ও মানবাধিকার কর্মী)
সম্প্রতি উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ এলাকায় একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড শব্দ, আগুন, ধোঁয়া এবং ধ্বংসস্তূপে বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতির কারণে ভবিষ্যতে মারাত্মক রোগের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনেক শিক্ষার্থী এখনো ভীত এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। অনেকেই স্কুলে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। শিক্ষকদের মতে, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ও স্বাভাবিক আচরণে বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জেট ফুয়েল থেকে ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া, পোড়া প্লাস্টিক, রঙ, রাবার, অ্যাসবেস্টস, সিসা এবং বিভিন্ন বিষাক্ত কেমিক্যাল বাতাসে মিশে স্কুল ক্যাম্পাসসহ আশপাশের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করতে পারে। এই উপাদানগুলো দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের রোগ, ত্বকের সমস্যা, স্নায়বিক দুর্বলতা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
Jet fuel থেকে নিঃসৃত Benzene ও Dioxin নামক কেমিক্যাল মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী বলে আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত। পোড়া রঙ ও প্লাস্টিক থেকেও টক্সিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বড় একটি দুর্ঘটনার ট্রমা শিশু-কিশোরদের মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকের মধ্যে ভয়, দুঃস্বপ্ন, ঘুমের সমস্যা, একাকীত্ব, মনোযোগের অভাব ও আচরণগত সমস্যা তৈরি হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে এখনই স্কুল ক্যাম্পাস এবং আশেপাশের পরিবেশ পরীক্ষা করে বিষাক্ত উপাদান শনাক্ত করা প্রয়োজন। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যৌথভাবে বায়ু, পানি ও মাটির বিশ্লেষণ করা উচিত। একইসঙ্গে শিক্ষক, ছাত্র এবং কর্মচারীদের অন্তত ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার।
এছাড়া মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে গ্রুপভিত্তিক কাউন্সেলিং, ভয় দূর করার সেশন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী মিউজিক, সাউন্ড বা ফ্রিকোয়েন্সী থেরাপির মতো কার্যকর পদ্ধতি ব্যবহার করার সুপারিশ করেছেন গবেষকরা।
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, ব্র্যাক হেলথ, রেড ক্রিসেন্ট, ইউনিসেফ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং ACI ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসা উচিত।
অভিভাবকদের আহ্বান করা হয়েছে যেন তারা সন্তানের আচরণ ও স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখেন এবং সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসা নেন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, একটি দুর্ঘটনার প্রভাব যেন একটি পুরো প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত না করে, সেই জন্য সময়মতো সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া এখনই জরুরি।